গাজায় যুদ্ধ: হামাসকে হারাতে মরিয়া, থামবে না ইসরায়েল!

গাজায় যুদ্ধ বন্ধের কোনো সম্ভাবনা নেই, হামাসকে নির্মূল না করা পর্যন্ত ইসরায়েলের অনড় অবস্থান।

তেল আবিব, ১৪ মে, ২০২৪: গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান বন্ধ করার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এমনকি জিম্মিদের মুক্তি দিতে সমঝোতা হলেও যুদ্ধ থামানো হবে না বলে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন।

মঙ্গলবার নেতানিয়াহুর এই মন্তব্যের পর জিম্মি মুক্তির বিষয়ে নতুন করে আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

গত সোমবার হামাস শেষ জীবিত মার্কিন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার পর একটি যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছিল। যদিও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, হামাসকে নির্মূল করাই তাদের প্রধান লক্ষ্য।

খবর অনুযায়ী, মঙ্গলবার গাজায় দুটি হাসপাতালে বোমা হামলা চালানো হয়, যাতে অন্তত আটজন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছে।

নেতানিয়াহুর এই কঠোর অবস্থানের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার সম্পর্ক আরও খারাপ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ইসরায়েলি-মার্কিন নাগরিক এডান আলেকজান্ডারের মুক্তির মধ্য দিয়ে প্রায় ১৯ মাস ধরে চলা যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটবে বলে আশা করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় হতাহতের ঘটনা বাড়ছেই। মঙ্গলবার খান ইউনিসের একটি হাসপাতালে হামলা চালানো হয়, যেখানে হামাসের ‘কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার’ ছিল বলে দাবি ইসরায়েলের।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ওই হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত এবং ৪০ জন আহত হয়েছে। এর আগে, দিনের শুরুতে নাসের হাসপাতালেও হামলা চালানো হয়, যেখানে দুই জন নিহত হয়।

নেতানিয়াহু আহত সৈন্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বলেন, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় তাদের অভিযান আরও জোরদার করতে প্রস্তুত। হামাসকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করাই তাদের লক্ষ্য।

তিনি আরও বলেন, যদি হামাস আরও জিম্মিকে মুক্তি দিতে রাজি হয়, তবে তাদের ফিরিয়ে আনা হবে, কিন্তু যুদ্ধ বন্ধ করা হবে না।

এদিকে, হামাস জানিয়েছে, তারা ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের বিনিময়ে অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দিতে রাজি আছে।

গত বছরের ৭ অক্টোবরের হামাস-এর হামলার পর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে সংঘাত চলছে। হামাসের হামলায় প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয়।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলায় এখন পর্যন্ত ৫২,৮০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, গাজায় মানবিক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। গত ২ মার্চ থেকে অবরোধের কারণে অপুষ্টিতে ভোগা ৫৭ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ড. রিক পিপারকর্ন জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামী ১১ মাসে প্রায় ৭১,০০০ শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার হবে।

এডান আলেকজান্ডারের মুক্তি : জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আলোচনা যখন চলছে, ঠিক সেই সময়ে সোমবার ২১ বছর বয়সী এডান আলেকজান্ডারকে মুক্তি দেয় হামাস। আলেকজান্ডারকে ২০১৯ সালে একটি সেনা ঘাঁটি থেকে অপহরণ করা হয়েছিল।

আলেকজান্ডারের মুক্তির পর নেতানিয়াহুর প্রতি সমালোচনা আরও বেড়েছে। সমালোচকদের অভিযোগ, যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার কারণে জিম্মিদের জীবন আরও বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।

আলেকজান্ডারের বাবা-মা জানিয়েছেন, তাদের ছেলে বন্দী অবস্থায় অবর্ণনীয় কষ্টের শিকার হয়েছে। খাবার ও পানির অভাব, সেই সঙ্গে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তাকে দিন কাটাতে হয়েছে।

তারা নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে।

এদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাব অনুযায়ী, যুদ্ধ শেষে ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। নেতানিয়াহু বলেছেন, তাদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য উপযুক্ত দেশ খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *