ফিরে আসা দেহাবশেষ: হামাসের বিশ্বাসঘাতকতা ফাঁস করলেন নেতানিয়াহু!

গাজায় হামাস কর্তৃক ফেরত দেওয়া হয়েছে এমন একটি জিম্মির দেহাংশ, যা এর আগে উদ্ধার করা হয়েছিল, এমনটাই জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। মঙ্গলবার তিনি এই মন্তব্য করেন। নেতানিয়াহুর মতে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির একটি স্পষ্ট লঙ্ঘন।

প্রায় দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের সময় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজা থেকে প্রায় ৫১ জন জিম্মির দেহাবশেষ উদ্ধার করেছে। নেতানিয়াহু বলেন, হামাসের এই পদক্ষেপ চুক্তির শর্ত ভাঙা।

গাজায় এখনো ১৩ জন জিম্মির দেহাবশেষ রয়েছে, যা উদ্ধারের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তবে এই মৃতদেহগুলো দ্রুত ফিরিয়ে আনা একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হামাস জানিয়েছে, গাজার ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের কারণে মৃতদেহগুলো খুঁজে বের করতে তাদের সমস্যা হচ্ছে। অন্যদিকে, ইসরায়েল জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে মরদেহ ফেরত দিতে দেরি করার অভিযোগ করেছে।

এদিকে, অধিকৃত পশ্চিম তীরে মঙ্গলবার ভোরে ইসরায়েলি বাহিনী অভিযান চালিয়ে তিনজন ফিলিস্তিনি জঙ্গিকে হত্যা করেছে। ইসরায়েলি পুলিশ জানিয়েছে, জেনিনের কাছে একটি গুহা থেকে বের হওয়ার সময় তাদের গুলি করা হয়। জেনিন শহরটি জঙ্গি ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নিহত জঙ্গিরা ‘জেনিনে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল’। তবে বিস্তারিত কিছু জানায়নি তারা।

ঘটনার শুরুতেই দুই জঙ্গিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আহত তৃতীয় জনকেও পরে হত্যা করা হয়। ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই ওই গুহাটি ধ্বংস করতে বিমান হামলা চালানো হয়।

গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে সামরিক কার্যক্রম জোরদার করেছে। ইসরায়েলের দাবি, এসব অভিযানের মাধ্যমে তারা পশ্চিম তীরে জঙ্গিদের দমন করছে। তবে ফিলিস্তিনি ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, এতে বহু নিরীহ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

অন্যদিকে, ১০ অক্টোবর থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি চলছে। এই চুক্তির অংশ হিসেবেই সোমবার রাতে ইসরায়েলের কাছে আরও এক জিম্মির দেহাংশ হস্তান্তর করা হয়েছে। যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে হামাস মোট ১৬ জন জিম্মির দেহাবশেষ ইসরায়েলের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে। এখনও ১২ জনের মরদেহ গাজায় উদ্ধারের অপেক্ষায় রয়েছে।

মৃত জিম্মিদের ফিরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ইসরায়েল ফিলিস্তিনের ১৯৫ জনের মরদেহ ফেরত দিয়েছে। এদের অর্ধেকেরও কম শনাক্ত করা গেছে। সোমবার গাজা শহরের দেইর আল-বালাহ-তে পরিচয়হীন ৪১ জনের মরদেহ দাফন করা হয়। এছাড়া, নিহত জিম্মি ইয়োসি শারাবির শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়, যার দেহাবশেষ সম্প্রতি ফেরত পাওয়া গেছে।

জিম্মিদের মরদেহ উদ্ধারে সহায়তার জন্য গত সপ্তাহে মিশর বিশেষজ্ঞ দল ও ভারী সরঞ্জাম পাঠিয়েছে। খান ইউনিসে সোমবারও এই উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত ছিল।

যুদ্ধবিরতির শুরুতে জীবিত অবস্থায় ২০ জন জিম্মিকে ইসরায়েলে ফেরত পাঠানো হয়। এর বিনিময়ে ইসরায়েল প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেয়। মুক্তিপ্রাপ্তদের অধিকাংশই গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হয়েছিল। ইসরায়েলের বিচার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মুক্তি পাওয়া বন্দীদের মধ্যে প্রায় ২৫০ জন ছিলেন, যাদের অনেকের বিরুদ্ধে ইসরায়েলিদের ওপর হামলার অভিযোগ ছিল।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *