ট্রাম্পের শাসনে ইরানের বিরুদ্ধে নেতানিয়াহুর নীরবতা: ইসরায়েলের সুর নরম?

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চলছে, কিন্তু ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যেন অনেকটা নীরব দর্শক। এক দশক আগেও যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছিল, তখন নেতানিয়াহু ছিলেন এর কড়া সমালোচক।

বিভিন্ন সময়ে তিনি এই চুক্তির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, এমনকি মার্কিন কংগ্রেসেও ভাষণ দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন, যখন দুই পক্ষ নতুন করে আলোচনায় বসেছে, নেতানিয়াহুকে তেমন কোনো উচ্চবাচ্য করতে দেখা যাচ্ছে না।

নেতানিয়াহু মনে করেন, ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারে, তবে তা ইসরায়েলের জন্য চরম হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তিনি চান, ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো চুক্তি হোক না কেন, তাতে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কঠোরভাবে সীমিত করা হোক।

কিন্তু পরিস্থিতি এখন এমন যে, তিনি প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করতে পারছেন না। কারণ, ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রতি বরাবরই সমর্থন জুগিয়েছেন এবং নেতানিয়াহু মনে করেন, ট্রাম্পই ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় বন্ধু।

তাই ট্রাম্পকে অসন্তুষ্ট করার মতো কোনো কাজ করতে তিনি রাজি নন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নেতানিয়াহু কার্যত এক ধরনের “বন্দী” হয়ে পড়েছেন।

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর প্রত্যাশিত সম্পর্ক তৈরি হয়নি। ট্রাম্পের নীতি, বিশেষ করে বাণিজ্যনীতি এবং ইরানের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে, নেতানিয়াহুর প্রত্যাশা পূরণ করেনি।

এমনকি, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর ব্যাপারেও ট্রাম্পকে রাজি করানো যায়নি। নেতানিয়াহু সব সময়ই ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির বিরোধিতা করেছেন।

তিনি মনে করেন, এটি শুধু ইসরায়েলের জন্য নয়, বরং পুরো বিশ্বের জন্যই হুমকি স্বরূপ। ওবামা প্রশাসনের আমলে হওয়া পরমাণু চুক্তিরও তিনি বিরোধিতা করেছিলেন।

নেতানিয়াহুর দৃঢ় সমর্থন ছিল ট্রাম্পের প্রতি, যিনি ক্ষমতায় আসার পর ওবামার করা চুক্তি বাতিল করেন। এমনকি, ট্রাম্প গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের অভিযানকে সমর্থন দিয়েছেন এবং ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিয়েছেন।

কিন্তু এখন যখন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে, তখন নেতানিয়াহু চাইলেও ট্রাম্পের নীতির বিরোধিতা করতে পারছেন না। কারণ, এতে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্কের অবনতি হতে পারে।

এর আগে, ২০২০ সালে মার্কিন নির্বাচনে জো বাইডেন জয়ী হওয়ার পর নেতানিয়াহু তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। এতে ট্রাম্প অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন এবং তাঁদের সম্পর্ক শীতল হয়ে যায়।

তবে ইসরায়েল এখনো চাইছে, ইরানের সঙ্গে হওয়া যে কোনো চুক্তিতে তাদের নিরাপত্তা উদ্বেগের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হোক। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যদি ইসরায়েল ইরানের ওপর সামরিক হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তবে সম্ভবত তাদের একাই সেই কাজটি করতে হবে, কারণ আলোচনা চলাকালীন অন্য কোনো দেশের কাছ থেকে তেমন সমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনা কম।

নেতানিয়াহু চান, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা হোক। তিনি চান, ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো ধ্বংস করা হোক এবং দেশটি যাতে ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করতে না পারে, সে বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

তবে ট্রাম্প এই বিষয়ে কতটা কঠোর হবেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। কারণ, ইরান তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করতে রাজি নয়। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে আলোচনা এখনো চলছে।

তারা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার উপায় খুঁজছে, যাতে দেশটি পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে না পারে। যদিও ট্রাম্প এখনো পর্যন্ত বলেছেন, সামরিক বিকল্প খোলা আছে, তবে তিনি আলোচনার মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান করতে চান।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, নেতানিয়াহুর জন্য সবচেয়ে ভালো পরিস্থিতি হবে, যদি এই আলোচনা ব্যর্থ হয়।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *