ইরানে বোমা: নেতানিয়াহুর হাসি, এরপর কী? বিস্ফোরক খবর!

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোমা হামলাকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু’র উল্লাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এই ঘটনার পর নেতানিয়াহু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তাঁর নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো এই অঞ্চলে ‘সমৃদ্ধি ও শান্তির’ সূচনা করবে।

দীর্ঘদিন ধরেই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন নেতানিয়াহু। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই তিনি এটিকে ইসরায়েলের জন্য একটি ‘মারাত্মক হুমকি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বিভিন্ন সময়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তিনি বোমা আকৃতির কার্টুন প্রদর্শন করে বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু এতদিন তাঁর সমালোচকেরা বলতেন, নেতানিয়াহুর বাগ্মিতা আছে, কিন্তু সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেই।

তবে গত কয়েক দিনের ঘটনাপ্রবাহ যেন দৃশ্যপটটাই বদলে দিয়েছে। ইসরায়েল প্রথমে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় এবং এরপর যুক্তরাষ্ট্রও এতে যোগ দেয়। বিশ্লেষকদের মতে, এর মাধ্যমে নেতানিয়াহু কার্যত তাঁর দীর্ঘদিনের লক্ষ্য অর্জনে সফল হয়েছেন। এই অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পাওয়াটা তাঁর জন্য একটি বড় সাফল্য।

নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী আভিব বুশিনস্কি মনে করেন, এই হামলা নেতানিয়াহুর ‘সবচেয়ে বড় অর্জন’। বুশিনস্কি সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “নেতানিয়াহু শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো অভিযানটি পরিচালনা করেছেন।

তাঁর মতে, এই সাফল্যের কারণে নেতানিয়াহু ইসরায়েলের ইতিহাসে অন্যতম সেরা নেতা হিসেবে চিহ্নিত হবেন।

যদিও ৭ অক্টোবরের হামলায় নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় নেতানিয়াহুর ভাবমূর্তিতে কিছুটা কালিমা লেগেছে, তবে ইরানের বিরুদ্ধে এই অভিযান তাঁর রাজনৈতিক জীবনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বুশিনস্কি আরও বলেন, “ইরানিদের পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংস করার কৃতিত্ব নেতানিয়াহুর।

তবে এখন নেতানিয়াহুর সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইরানের সেনারা যদি মার্কিন সেনাদের ওপর হামলা না চালায়, তাহলে এই অভিযান এখানেই শেষ হবে। কিন্তু ইসরায়েল এখনো তাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছে। ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস-এর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফ্রিন জানিয়েছেন, তাঁরা ‘দীর্ঘমেয়াদী অভিযানের’ প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক বেন-ডর ইয়েমিনি মনে করেন, “নেতানিয়াহুকে পছন্দ না করলেও, এটা মানতেই হবে যে তিনি কিছু একটা করেছেন।

তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, এখন পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল। ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র – উভয়কেই কূটনীতি এবং বিচক্ষণতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সাবেক ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত ড্যান শাপিরো মনে করেন, এই ধরনের সামরিক অভিযানে ঝুঁকি থাকে। তবে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে রুখতে পদক্ষেপ না নেওয়াটাও ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। শাপিরো বলেন, “এই ঘটনাকে শেষ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত হবে না। এর ফল কী হবে, তা নির্ভর করে আমরা পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দিচ্ছি তার ওপর।

ইসরায়েলের সমাজে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে। একটি জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৭০ শতাংশ ইসরায়েলি ইরানের বিরুদ্ধে অভিযানকে সমর্থন করে এবং তাঁদের মধ্যে অনেকেই মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়াই এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *