ফিরে আসা? ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেতানিয়াহুর উত্থান!

ইরান-ইসরাইল সংঘাত: নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ভবিষ্যতের নতুন মোড়?

গত ৭ই অক্টোবর হামাসের হামলার পর যেন অনেকটাই ভেঙে পড়েছিলেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সেই হামলায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল গোটা দেশ, কমে গিয়েছিল তাঁর জনপ্রিয়তাও।

কিন্তু ইরানের সঙ্গে চলমান উত্তেজনা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নেতানিয়াহুকে যেন নতুন করে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। অনেকের মতে, এর মাধ্যমে নেতানিয়াহু তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে নতুন একটি মোড় নিতে পারেন।

যদিও ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মুখে ইসরাইলি শহরগুলো এখনো পর্যন্ত বেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আগামী বছর নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে বলা যায়, নেতানিয়াহু এই পরিস্থিতি থেকে রাজনৈতিক ফায়দা কতটা তুলতে পারবেন, তা এখনই নিশ্চিত নয়।

আন্তর্জাতিক মহলে গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রস্তুতি চলছে, এবং আরব বিশ্বেও তিনি তীব্র সমালোচিত। প্রায় দুই বছর ধরে চলা এই অঞ্চলে সংঘাতে বহু মানুষ নিহত হয়েছে, যার জন্য অনেকে নেতানিয়াহুকে দায়ী করেন।

তবে দেশের অভ্যন্তরে, যেখানে নেতানিয়াহুর দৃষ্টি সব সময় নিবদ্ধ থাকে, সেখানে পরিস্থিতি ভিন্ন। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে নেতানিয়াহুর দীর্ঘদিনের অবস্থানকে অনেক ইসরাইলি সমর্থন করেন।

তাঁরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি হস্তক্ষেপ তাঁদের জন্য স্বস্তিদায়ক।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নেতানিয়াহুকে বিভেদ সৃষ্টিকারী এবং ধ্বংসাত্মক নেতা হিসেবে দেখা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে অনেক কথা বলার কিন্তু কাজ না করার অভিযোগও রয়েছে।

তবে, এই পরিস্থিতিতে নেতানিয়াহু নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করার সুযোগ পেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের পর এক ভিডিও বার্তায় তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন এবং একে ‘ইতিহাস পরিবর্তনকারী’ পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেন।

হামাসের হামলার পর নেতানিয়াহুকে অনেকেই কার্যত রাজনৈতিকভাবে দুর্বল মনে করেছিলেন। অনেকেই মনে করেন, গাজায় হামাসকে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতা ধরে রাখতে সাহায্য করার পেছনে নেতানিয়াহুর ভুল নীতি ছিল।

সেই হামলায় ১,২০০ জন নিহত হয়েছিল এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল।

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে নেতানিয়াহুর দীর্ঘদিনের উদ্বেগ, যা অনেকের মতে এক প্রকার ‘একগুঁয়েমি’, এখন যেন আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। ১৯৯০-এর দশকে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই তিনি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এসেছেন।

তিনি সব সময় ইরানকে ইসরাইলের জন্য একটি প্রধান হুমকি হিসেবে চিত্রিত করেছেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণেও তিনি ইরানের পারমাণবিক বোমা তৈরির চেষ্টার কথা তুলে ধরেছিলেন।

যদিও ইরান বরাবরই বলে আসছে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।

নেতানিয়াহু তাঁর এই ‘ক্রুসেড’-এর অংশ হিসেবে কূটনৈতিক ঝুঁকিও নিয়েছেন। ২০১৫ সালে তিনি মার্কিন কংগ্রেসে ভাষণ দিয়ে ইরানের সঙ্গে হওয়া পারমাণবিক চুক্তিকে সরাসরি বিরোধিতা করেছিলেন, যা তৎকালীন ওবামা প্রশাসনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ককে আরও কঠিন করে তোলে।

অনেকে মনে করেন, ইরানের ওপর নেতানিয়াহুর এই অতিরিক্ত মনোযোগ এবং সামরিক-গোয়েন্দা সম্পদ বিনিয়োগের কারণেই সম্ভবত গাজায় হামাসের হুমকিকে তিনি সেভাবে গুরুত্ব দেননি।

গাজায় যুদ্ধ এখনো চলছে এবং নেতানিয়াহু সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার স্বপ্ন দেখেন। তবে, ইরানের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যে নেতানিয়াহু রাজনৈতিকভাবে কতটা সুবিধা করতে পারবেন, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, উইনস্টন চার্চিলের মতো নেতানিয়াহুরও ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *