ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেটের প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তের জেরে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে কর্তৃত্ববাদের অভিযোগ আরও জোরালো হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
রবিবার এক ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, রোনেন বার-এর সঙ্গে তার ‘ক্রমবর্ধমান আস্থার সংকট’ তৈরি হওয়ায় তিনি আর একসঙ্গে কাজ করতে পারছেন না।
নেতানিয়াহু বলেন, “আমরা আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য যুদ্ধ করছি… এমন সংকটপূর্ণ সময়ে প্রধানমন্ত্রীর অবশ্যই শিন বেটের প্রধানের প্রতি পূর্ণ আস্থা থাকতে হবে। দুর্ভাগ্যবশত, পরিস্থিতি এখন এর বিপরীত।
গত বছরের ৭ই অক্টোবর হামাসের অপ্রত্যাশিত হামলার জন্য নিরাপত্তা ব্যর্থতার দায় নিয়ে নেতানিয়াহু ও বারের মধ্যে মতবিরোধ চলছিল। ওই হামলায় প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই ছিল বেসামরিক নাগরিক।
এছাড়া ২৫১ জনকে অপহরণ করা হয়েছিল। শিন বেট মূলত ফিলিস্তিনি জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর ওপর নজরদারি করে থাকে।
সম্প্রতি, সংস্থাটি হামলার বিষয়ে তাদের ব্যর্থতা স্বীকার করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে তারা নেতানিয়াহু সরকারের নীতির সমালোচনাও করে। যদিও নেতানিয়াহু হামলার দায় নিতে রাজি হননি।
নেতানিয়াহুর এই পদক্ষেপে তার কট্টর-ডানপন্থী মিত্ররা স্বাগত জানিয়েছেন। সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির একে ‘দেরিতে হলেও ভালো’ বলে মন্তব্য করেছেন।
তবে বিরোধী দলের নেতা ইয়াইর লাপিদ বারকে বরখাস্তের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক বলেছেন, নেতানিয়াহু ‘ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন’ এবং ‘আইনের শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছেন’।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো অভিযোগ করেছে যে নেতানিয়াহু হামাসকে শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে কাতার থেকে আসা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আর্থিক সহায়তা পেতে দিয়েছেন। এই অভিযোগের কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছেন, গাজায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের বিপরীতে হামাসকে একটি প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি হিসেবে দাঁড় করানো ছিল সম্ভবত এর উদ্দেশ্য।
বার-এর পূর্বসূরি নাদাভ আর্গামান সম্প্রতি নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আইন ভঙ্গের প্রমাণ পেলে সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশের হুমকি দেন। এর প্রতিক্রিয়ায় নেতানিয়াহু আর্গামানের বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগ এনে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
শিন বেটের পক্ষ থেকে নেতানিয়াহুর ঘোষণার তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে এক বিবৃতিতে বার বলেছেন, শিন বেটের প্রধান ‘প্রথম এবং সর্বাগ্রে ইসরায়েলের নাগরিকদের প্রতি’ দায়বদ্ধ।
বার আরও বলেন, নেতানিয়াহুর ‘ব্যক্তিগত আনুগত্যের প্রত্যাশা জনস্বার্থের পরিপন্থী এবং মৌলিকভাবে ভুল’। তিনি এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠনেরও আহ্বান জানিয়েছেন।
নেতানিয়াহু অবশ্য বারবার ২০২৩ সালের হামলার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক তদন্ত কমিশন গঠনের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং তিনি এই ব্যর্থতার জন্য মূলত সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর ওপর দোষ চাপিয়েছেন।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বেশ কয়েকজন শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে হয় বরখাস্ত করা হয়েছে, অথবা পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে।
বার এখন পর্যন্ত হামলার পর স্বপদে বহাল থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে অন্যতম। বারকে অপসারণ করা হলে, নেতানিয়াহু তার স্থানে একজন অনুগত ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে পারেন, যা তদন্ত কমিশনের কার্যক্রমকে ধীর করে দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নেতানিয়াহু বলেছেন, বারকে সরানোর ফলে ইসরায়েল ‘যুদ্ধ জয়ের লক্ষ্য অর্জন করতে এবং পরবর্তী বিপর্যয় রোধ করতে’ সক্ষম হবে।
উল্লেখ্য, নেতানিয়াহুর অফিসের কর্মীদের কাতার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে শিন বেটের তদন্তে প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। ইয়াইর লাপিদ বলেছেন, বারকে বরখাস্ত করার মূল উদ্দেশ্য ছিল এই তদন্তকে বানচাল করা।
গাজায় চলমান যুদ্ধকালে জিম্মি-সংক্রান্ত আলোচনায় শিন বেট এবং বার ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। সম্প্রতি নেতানিয়াহু বারকে আলোচনা দল থেকে সরিয়ে তার জায়গায় মন্ত্রিসভার একজন অনুগত মন্ত্রীকে নিযুক্ত করেছেন।
নেতানিয়াহু ও তার মিত্রদের বিচার বিভাগীয় সংস্কারের চেষ্টা, যা ব্যাপকভাবে কর্তৃত্ববাদী হিসেবে সমালোচিত হয়েছে, হামাস হামলার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সমালোচকদের মতে, এই পদক্ষেপগুলো ইসরায়েলের রাজনীতিকে বিভক্ত করেছে এবং দেশের প্রতিরক্ষা দুর্বল করেছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান