ইসরায়েলের নিরাপত্তা প্রধানকে বরখাস্ত: নেতানিয়াহুর চাঞ্চল্যকর দাবি!

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেছেন যে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেতের প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত কাতার সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে চলমান তদন্তের কারণে নেওয়া হয়নি। তিনি জানান, গত বছরের ৭ অক্টোবর হামলায় শিন বেতের দেওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতেই বারকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক বিষয়ক তদন্ত শুরুর আগে থেকেই এই প্রক্রিয়া চলছিল।

নেতানিয়াহু আরও বলেন, “রোনেন বার শিন বেতের প্রধান হিসেবে আর থাকবেন না। কোনো গৃহযুদ্ধ হবে না, এবং ইসরায়েল একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবেই থাকবে।

শিন বেত সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাতার সরকারের সংযোগ নিয়ে তারা ফেব্রুয়ারির শুরুতে তদন্ত শুরু করে, যা ৭ অক্টোবরের রিপোর্টের প্রকাশের পূর্বের ঘটনা। অভিযোগ উঠেছে যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থার কিছু সদস্য কাতারের স্বার্থ রক্ষার জন্য অর্থ গ্রহণ করেছেন।

বারকে অপসারণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ইতিমধ্যে হাজার হাজার ইসরায়েলি নাগরিক রাস্তায় নেমে এসেছেন। তারা এই পদক্ষেপকে দেশের গণতন্ত্রের ওপর আঘাত হিসেবে দেখছেন। গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলার পুণরায় শুরু হওয়া এবং এতে ২০০ শিশুসহ ৫৯০ জনের বেশি মানুষের নিহত হওয়ার ঘটনা বিক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলেছে।

এদিকে, সুপ্রিম কোর্ট নেতানিয়াহুর এই সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে এবং আগামী ৮ এপ্রিলের মধ্যে এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেলও বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নতুন কোনো শিন বেত প্রধানকে নিয়োগ দিতে পারবেন না।

নেতানিয়াহু এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে বলেন, নিরাপত্তা সংস্থার প্রধানদের বরখাস্ত ও নিয়োগ দেওয়া তাঁর অধিকার। শনিবারের ভাষণে তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, সরকারের নিরাপত্তা সংস্থার প্রধানদের বরখাস্ত করার ক্ষমতা রয়েছে।

অন্যদিকে, বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার ল্যাপিড নেতানিয়াহুর প্রতি আদালতের সিদ্ধান্ত মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন এবং তা না হলে দেশব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। ল্যাপিড বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ নিলে সরকার ‘আইনের বাইরে’ চলে যাবে।

বিরোধী দলের পক্ষ থেকে শিন বেত প্রধানকে বরখাস্ত করার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে এবং এটিকে স্বার্থের সংঘাত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। নেতানিয়াহু বর্তমানে তিনটি পৃথক দুর্নীতি মামলার আসামি, যেখানে জালিয়াতি, ঘুষ ও বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে।

গাজায় সামরিক অভিযান পুনরায় শুরুর কারণে মঙ্গলবার তাঁর দুর্নীতি মামলার শুনানির তারিখ বাতিল করা হয়। নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরে তাঁর সমালোচক দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল গালি বাহারাভ-মিয়ার অপসারণও চেয়েছেন। সরকার আগামী রবিবার তাঁর অপসারণ প্রক্রিয়া শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বিক্ষোভকারীরা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন এবং গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্তির জন্য একটি চুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগে যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ তৈরি হয়েছিল এবং ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে বন্দী বিনিময়ের পথ খুলেছিল।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *