ছেলেদের ভবিষ্যৎ: নেটফ্লিক্সের ‘অ্যাডোলসেন্স’ সিরিজে অভিভাবকদের সতর্কবার্তা!

তরুণ ছেলেদের সংকট: নেটফ্লিক্সের ‘অ্যাডোলেসেন্স’ (Adolescence) সিরিজ, অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার আহ্বান বর্তমান বিশ্বে কিশোর-কিশোরীদের জীবনযাত্রা তাদের বাবা-মায়ের সময়ের থেকে অনেক ভিন্ন।

প্রযুক্তির অগ্রগতি, সামাজিক মাধ্যমের প্রভাব, এবং মানসিক স্বাস্থ্যের চ্যালেঞ্জগুলো তাদের জীবনকে জটিল করে তুলেছে। সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত নেটফ্লিক্স (Netflix) সিরিজ ‘অ্যাডোলেসেন্স’ (Adolescence) তেমনই একটি সংকটপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছে, যা বিশেষভাবে অভিভাবকদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।

সিরিজটি মূলত একজন ১৩ বছর বয়সী কিশোর, জেমি মিলারকে (Jamie Miller) কেন্দ্র করে নির্মিত। একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে, ডিটেকটিভ ইন্সপেক্টর লুক বাসকম্বের (Luke Bascombe) ছেলে, যে নিজেও ওই স্কুলের ছাত্র, ঘটনার গভীরে প্রবেশ করে।

সামাজিক মাধ্যমে ব্যবহৃত কিছু সাংকেতিক চিহ্নের মাধ্যমে, সে জানতে পারে, জেমির সহপাঠী কেটি আসলে তাকে এক ধরনের মানসিক নির্যাতনের শিকার করত। এই চিহ্নগুলো ‘ম্যানোস্ফিয়ার’ (manosphere) এবং ‘ইনসেল’ (incel) সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত, যা পুরুষত্ব, নারীবিদ্বেষ এবং সামাজিক সম্পর্কের জটিলতা নিয়ে গঠিত।

ইনসেল ধারণা অনুযায়ী, কিছু পুরুষ নিজেদের নারীবিদ্বেষী এবং একঘরে করে তোলে, কারণ তারা মনে করে নারীরা তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয় না।

‘অ্যাডোলেসেন্স’ (Adolescence) সিরিজের নির্মাতারা কিশোর বয়সের মানসিক অবস্থা, আধুনিক পুরুষত্ব, অনলাইন বুলিং (online bullying), এবং স্মার্টফোন ব্যবহারের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। সিরিজটি প্রমাণ করে, কীভাবে একটি ভুল ধারণা বা সামান্য একটি ঘটনার সূত্র ধরে একটি শিশুর জীবন অন্ধকারে ঢেকে যেতে পারে।

নির্মাতাদের মতে, এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন পরিবার, বিদ্যালয় এবং সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টা।

সিরিজটির সহ-নির্মাতা জ্যাক থর্ন (Jack Thorne) জানান, তিনি সমাজের অন্ধকার দিকগুলো, বিশেষ করে কিশোরদের মানসিক ক্রোধ এবং অনলাইনে তাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে জানতে গবেষণা করেছেন। তিনি রেডডিট (Reddit) ও ৪চ্যান (4chan)-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলো থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন।

তাঁর মতে, কিশোর বয়সে ছেলে-মেয়েরা সমাজের ক্ষতিকর ধারণাগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং এর ফলস্বরূপ তারা নিজেদের মধ্যে এক ধরনের বিদ্বেষ তৈরি করে।

নির্মাতারা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে ধরেছেন: কেন জেমি এমনটা করল? সিরিজের দ্বিতীয় পর্বে, তারা শিক্ষাব্যবস্থা এবং সহপাঠীদের প্রভাব তুলে ধরেন। তৃতীয় পর্বে, তারা জেমির মানসিক জগৎ এবং তার চিন্তা-ভাবনার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন।

চতুর্থ পর্বে, তারা অভিভাবকদের দায়িত্ব এবং তাদের করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরেন।

নির্মাতাদের মতে, একটি শিশুর বেড়ে ওঠায় যেমন সমাজের ভূমিকা থাকে, তেমনি একটি শিশুকে ধ্বংস করার পেছনেও সমাজের ভূমিকা থাকতে পারে। এখানে স্কুল ব্যবস্থা, অভিভাবকদের উদাসীনতা, বন্ধুদের ভুল বোঝাবুঝি এবং ইন্টারনেটের ক্ষতিকর প্রভাব—এগুলো সবই জেমির জীবনে ধ্বংস ডেকে এনেছে।

জ্যাক থর্ন (Jack Thorne) তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, সন্তানদের প্রতি অভিভাবকদের আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত। তিনি মনে করেন, সন্তানদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা এবং তাদের উদ্বেগের কারণগুলো বোঝার চেষ্টা করা প্রয়োজন।

তিনি আরও যোগ করেন, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে নীতিমালা তৈরি করা এবং কিশোর-কিশোরীদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি।

এই সিরিজে প্রতিটি দৃশ্য একটানা ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছে, যা গল্প বলার একটি নতুন শৈলী তৈরি করেছে। এই ধরনের নির্মাণ দর্শকদের মনোযোগ ধরে রাখতে সহায়তা করে এবং ঘটনার গভীরে প্রবেশ করতে উৎসাহিত করে।

‘অ্যাডোলেসেন্স’ (Adolescence) সিরিজটি সমাজের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে: কিশোরদের কথা শোনা উচিত। তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে।

অভিভাবকদের পাশাপাশি শিক্ষক এবং নীতিনির্ধারকদেরও এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন (CNN)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *