বিচিত্র ডাইনোসর! কাঠবিড়ালীর মতো দেখতে, হাতে নেই একটি আঙুল!

**মঙ্গোলিয়ার বুকে নতুন আবিষ্কার: দুই আঙুলের ডাইনোসর, যা আধুনিক অলস প্রাণীর মতোই!**

বিগত কয়েক বছর ধরে, বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত পৃথিবীর বুকে লুকিয়ে থাকা বিভিন্ন জীবাশ্ম আবিষ্কার করে চলেছেন। সম্প্রতি, মঙ্গোলিয়ার গোবি মরুভূমিতে পাওয়া গেছে এক নতুন প্রজাতির ডাইনোসরের জীবাশ্ম, যা বিজ্ঞানীদের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।

এই ডাইনোসরটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো এর দুটি মাত্র আঙুল! এই বিরল আবিষ্কারটি শুধু ডাইনোসর জগৎকে নতুন করে চিনতে সাহায্য করবে না, বরং বিবর্তন এবং প্রাণীকুলের গঠন সম্পর্কেও নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

নতুন আবিষ্কৃত ডাইনোসরের প্রজাতিটির নাম দেওয়া হয়েছে *Duonychus tsogtbaatari*, যার অর্থ “ডাবল ক্ল” বা “দ্বৈত নখর”।

এই নামকরণ করা হয়েছে এর প্রধান বৈশিষ্ট্য, অর্থাৎ দুটি নখরযুক্ত আঙুলের ওপর ভিত্তি করে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই জীবাশ্মগুলি প্রায় ৯০ মিলিয়ন বছর আগের। অর্থাৎ, ক্রিটেসিয়াস যুগে এই ডাইনোসরগুলি পৃথিবীতে বিচরণ করত।

জাপানের হোক্কাইডো বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাশ্মবিদ ইয়োশিতসুগু কোবায়াশি এবং তাঁর সহকর্মীরা এই আবিষ্কারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

তাঁদের মতে, *Duonychus tsogtbaatari*র জীবাশ্ম পরীক্ষা করে জানা যায়, এর নখরগুলি ছিল বেশ শক্তিশালী এবং বাঁকানো।

এই নখরগুলি সম্ভবত গাছের ডালপালা আঁকড়ে ধরার কাজে ব্যবহার হতো, অনেকটা আধুনিক যুগের অলস প্রাণীদের মতো।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, *Duonychus tsogtbaatari* ছিল প্রায় ৫৭০ পাউন্ড ওজনের এবং ১৩ ফুটের বেশি লম্বা।

তারা ঘাস, লতা-পাতা এবং অন্যান্য উদ্ভিদ খেয়ে জীবন ধারণ করত। বিজ্ঞানীরা আরও উল্লেখ করেছেন, এই ডাইনোসরের আঙুলের নখরের বাইরের আবরণ (কেরাটিন) ভালোভাবে সংরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া গেছে, যা আগে কোনো বৃহৎ থেরোপড ডাইনোসরের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি।

এই আবিষ্কারটি ডাইনোসরদের বিবর্তন সম্পর্কে নতুন কিছু ধারণা দেয়।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিভিন্ন ডাইনোসরের প্রজাতিতে আঙুলের সংখ্যা ভিন্ন হওয়ার কারণ হলো তাদের খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার ধরন।

যেমন, মাংসাশী টাইরানোসরাস রেক্স-এর (T. rex) ছোট আকারের হাত ছিল এবং তাদের মাত্র দুটি আঙুল ছিল, যা শিকারকে আঁকড়ে ধরতে সাহায্য করত।

অন্য দিকে, *Duonychus tsogtbaatari*র বাঁকানো নখর সম্ভবত গাছপালা সংগ্রহের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী ছিল।

এই আবিষ্কার প্রমাণ করে যে, ডাইনোসরদের বিবর্তন খুবই জটিল একটি প্রক্রিয়া ছিল।

তাদের শারীরিক গঠন, খাদ্যাভ্যাস এবং পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা তাদের টিকে থাকতে সাহায্য করেছে।

এই ধরনের আবিষ্কারগুলি বিজ্ঞানীদের ডাইনোসর এবং অন্যান্য বিলুপ্ত প্রাণীদের সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে সাহায্য করে।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *