যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি রাজ্যে গণপরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ যাত্রী। বেতন-ভাতা নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে এই ধর্মঘট শুরু হয়েছে, যার ফলে নিউ জার্সি এবং নিউ ইয়র্ক সিটির মধ্যে ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।
শুক্রবার সকাল থেকে নিউ জার্সির বিভিন্ন স্টেশন ও টার্মিনালগুলোতে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি দেখা যায়। অনেক যাত্রী গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য বিকল্প পরিবহনের ব্যবস্থা করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হন। ধর্মঘটের কারণে কর্মদিবসের শুরুতে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়, যা সেখানকার জনজীবনে এক গভীর প্রভাব ফেলেছে।
ধর্মঘটে যাওয়া শ্রমিকদের সংগঠন ‘ব্রাদারহুড অফ লোকোমোটিভ ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড ট্রেইনমেন’-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের বেতন নিয়ে আলোচনা সফল হয়নি। তারা অন্যান্য অঞ্চলের রেল শ্রমিকদের মতো বেতন-ভাতা চাচ্ছেন। শ্রমিকদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ তাদের দাবি মানতে রাজি নয়।
অন্যদিকে, নিউ জার্সি ট্রানজিট কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ক্রিস কলুরি এই পরিস্থিতিকে ‘আলোচনার সাময়িক বিরতি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
জানা গেছে, শ্রমিক ইউনিয়ন চাইছে তাদের সদস্যদের জন্য বছরে ১ লক্ষ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার বেতন নির্ধারণ করা হোক। অন্যদিকে, কর্তৃপক্ষের দাবি, তাদের কর্মীরা বছরে গড়ে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার ডলার আয় করেন। কর্তৃপক্ষের মতে, ইউনিয়নের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে তাদের হিসাবের মিল নেই।
বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে তারা একমত হতে পারলেও, এর ফলে অন্যান্য ইউনিয়নের কর্মীদের মধ্যেও একই ধরনের বেতন-বৃদ্ধির দাবি উঠলে তা রাজ্যের আর্থিক অবস্থার ওপর প্রভাব ফেলবে।
এই ধর্মঘটের কারণে নিউ জার্সির গভর্নর ফিল মারফি বলেছেন, শ্রমিকদের জন্য ন্যায্য বেতন এবং একইসঙ্গে রাজ্যের করদাতাদের জন্য সাশ্রয়ী একটি সমাধান খুঁজে বের করা জরুরি। তিনি আরও জানান, আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত একটি সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে।
নিউ জার্সি রাজ্যে এর আগে সবশেষ এমন ধর্মঘট হয়েছিল প্রায় ৪০ বছর আগে। এই ধর্মঘটের কারণে শুধু সাধারণ মানুষই নয়, ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। জরুরি পরিষেবা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরাও পড়েছেন বিপাকে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত বাস পরিষেবা চালু করার পরিকল্পনা করলেও, তা পর্যাপ্ত নয় বলে জানা গেছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে কত দিন লাগবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
এই ঘটনার জেরে সেখানকার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে, যা শ্রমিক অধিকার এবং গণপরিবহন ব্যবস্থার গুরুত্বের বিষয়টি আবারও সামনে নিয়ে এসেছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস