গর্ভধারণের পর সন্তানের জন্ম, ৯ দিনের মাথায় মায়ের শরীরে বিরল টিউমার!
ছোট্ট একটি শিশুর জন্ম দেওয়ার আনন্দ তখনও কাটেনি, এরই মধ্যে এক দুঃসংবাদ! যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনের বাসিন্দা, ২৯ বছর বয়সী লিডিয়া ডাচের, যখন তার স্বামী ম্যাথিউর সাথে মিলে ভালোবাসা দিবস উদযাপনের জন্য একটি বিশেষ ডেজার্ট তৈরি করছিলেন, তখনই তার জীবন বদলে দেওয়া সেই ফোনকলটি আসে।
ডাক্তার ড্যানিয়েল হার্টউইগ ফোন করে জানান, লিডিয়ার প্লাসেন্টাতে একটি টিউমার ধরা পড়েছে। “আমি ভেবেছিলাম, ডাক্তার হয়তো থিও (ছেলে)-এর কোনো সমস্যা নিয়ে কথা বলবেন,” লিডিয়া জানান। “কিন্তু খবরটা ছিল আমার নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে।
ডাক্তারের এই কথা শুনে প্রথমে হতভম্ব হয়ে যান লিডিয়া ও ম্যাথিউ। উদ্বেগের সাথে তারা ইন্টারনেটে এই বিষয়ে আরও তথ্য খুঁজতে শুরু করেন, যদিও ডাক্তার তাদের সতর্ক করেছিলেন। পরে জানা যায়, লিডিয়ার শরীরে “কোরিওকার্সিনোমা” নামক বিরল ক্যান্সার ধরা পড়েছে। এটি এমন একটি টিউমার যা সাধারণত গর্ভকালীন সময়ে তৈরি হয়, যখন ভ্রূণ জরায়ুর সাথে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই ক্যান্সার খুব দ্রুত ছড়ায় এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১ লক্ষ গর্ভবতী নারীর মধ্যে একজনেরও কম ক্ষেত্রে এটি দেখা যায়। লিডিয়ার চিকিৎসায় জড়িত ছিলেন গাইনিকোলজিক অনকোলজিস্ট ড. লিসা ব্যারোইলহেট।
২০২৪ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি, লিডিয়া তার ছেলে থিওকে জন্ম দেন। এর মাত্র তিন সপ্তাহ পর, ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়া টিউমারগুলোর চিকিৎসার জন্য তাকে ১০ সপ্তাহের কেমোথেরাপি নিতে হয়।
বর্তমানে লিডিয়া ক্যান্সারমুক্ত জীবন যাপন করছেন। তিনি বলেন, “আমি কৃতজ্ঞ যে আমার ছেলে থিও-এর কোনো ক্ষতি হয়নি এবং সে সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল।” (যদিও ক্যান্সারের কারণে থিও-এর শরীরে কোনো সমস্যা হবে কিনা, এমন সামান্য সম্ভাবনা ছিল, তবে পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসে।)
প্রসবের সময় লিডিয়ার শরীরে সংক্রমণ (কোরিওঅ্যামনিওনাইটিস) দেখা দেয়। এই কারণে তার প্লাসেন্টা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল, এবং সেখানেই টিউমারটি ধরা পড়ে। “আমি নতুন মা হওয়ার জন্য খুবই উদ্গ্রীব ছিলাম। মাতৃত্বকালীন ছুটি উপভোগ করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম, কিন্তু এমনটা (ক্যান্সার) আশা করিনি,” লিডিয়া বলেন।
যখন তিনি জানতে পারলেন যে তার ফুসফুসে বেশ কয়েকটি ছোট টিউমার রয়েছে, তখন তিনি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েন। “আমি ভেবেছিলাম, আমি হয়তো বাঁচব না।”
চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে লিডিয়ার শরীরে “হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন” (এইচসিজি) -এর মাত্রা কমতে শুরু করে, যা তাকে আশ্বস্ত করে তোলে যে তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।
চিকিৎসার কারণে লিডিয়ার শরীরে PICC লাইন বসানো হয়েছিল, যার ফলে ছেলেকে কোলে নিতে তার কষ্ট হতো। এই সময় তার স্বামী এবং পরিবারের সদস্যরা তাকে সমর্থন জুগিয়েছেন। এমনকি, সমাজের অন্যান্য মায়েরা এগিয়ে এসে মায়ের বুকের দুধ দান করেছিলেন, যাতে লিডিয়া তার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন। “আমি সবসময়ই অনুভব করেছি যে আমি একা নই, সবাই আমার পাশে আছে,” লিডিয়া জানান।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, লিডিয়াকে প্রতি মাসে তার এইচসিজি-এর মাত্রা পরীক্ষা করতে হবে। তবে ক্যান্সারের পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা খুবই কম এবং ভবিষ্যতে তিনি চাইলে আবার মা হতে পারবেন।
বর্তমানে লিডিয়ার পুরো মনোযোগ তার ১৫ মাস বয়সী সুস্থ ছেলের দিকে। “সে খুবই সুন্দর,” তিনি বলেন। ভবিষ্যতে, লিডিয়া এবং ম্যাথিউ ঠিক করবেন কীভাবে থিওকে তার ক্যান্সার-সংক্রান্ত অসুস্থতা সম্পর্কে জানাবেন। লিডিয়া আরও বলেন, “আমি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করব যে সে কতটা বিশেষ এবং আমি তার মা হতে পেরে কতটা ভাগ্যবান।
তথ্য সূত্র: পিপলস