**মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে পালানো কয়েদিদের সাহায্য করার অভিযোগে তৃতীয় ব্যক্তি গ্রেপ্তার**
গত সপ্তাহে নিউ অরলিন্স শহরের একটি কারাগার থেকে দশ জন কয়েদি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তৃতীয় এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। লুইজিয়ানা রাজ্যের পুলিশ বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ৫৯ বছর বয়সী কনি উইডেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যিনি পালানো কয়েদিদের মধ্যে একজন জার্মেইন ডোনাল্ডকে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নগদ অর্থ পাঠিয়েছিলেন।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার মধ্যরাতের কিছু আগে, অরলিন্স জাস্টিস সেন্টার থেকে ১০ জন কয়েদি পালিয়ে যায়। উইডেনকে নিউ অরলিন্সের প্রায় ৩০ মাইল উত্তর-পূর্বে অবস্থিত স্লিডেল শহর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই ঘটনার পর পাঁচজন কয়েদিকে এরই মধ্যে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে রাখা হয়েছে।
পলাতক কয়েদিদের বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুরুতর হামলা, অস্ত্রসহ মিথ্যাভাবে বন্দী করা এবং হত্যার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, উইডেন ডোনাল্ডের সাথে পালানোর আগে এবং পরেও মোবাইল ফোনে যোগাযোগ রেখেছিলেন। উইডেনের বিরুদ্ধে একটি অপরাধমূলক অভিযোগ আনা হয়েছে, যাতে দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ ৫০০ ডলার জরিমানা এবং পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের সম্ভাবনা রয়েছে।
লুইজিয়ানা রাজ্যের পুলিশ আরও জানায়, “যারা এই পলাতক আসামিদের সাহায্য করছে বা তাদের আশ্রয় দিচ্ছে, তারা আইনের লঙ্ঘন করছে এবং তাদের জবাবদিহি করতে হবে। পলাতকদের আশ্রয় দেওয়া আমাদের সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা হুমকিস্বরূপ, এবং তা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।”
এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে এর আগে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন হলেন, অরলিন্স প্যারিশ শেরিফের অফিসের রক্ষণাবেক্ষণ কর্মী, ৩৩ বছর বয়সী স্টার্লিং উইলিয়ামস। অভিযোগ উঠেছে, উইলিয়ামস ইচ্ছাকৃতভাবে কারাগার থেকে পালানোতে সহায়তা করেছেন।
এছাড়া, পলাতক কয়েদিদের পালাতে সহায়তার অভিযোগে আরও দুজনকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
লুইজিয়ানা রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল লিজ মুরিল ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, উইলিয়ামসের জড়িত থাকার বিষয়টি কেবল ওই রাতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি আরও বলেন, “আমরা মনে করি, এই ব্যক্তির জড়িত থাকার বিষয়টি কয়েক দিনের ছিল। আমি সময় এবং তারিখের বিস্তারিত জানাতে পারছি না, তবে আমরা বিশ্বাস করি এই ব্যক্তি ঘটনার সাথে বহু দিন ধরে জড়িত ছিলেন।”
কর্তৃপক্ষ জানায়, উইলিয়ামস কয়েদিদের পালাতে সহায়তা করার জন্য টয়লেটের পানি বন্ধ করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। অভিযোগ অনুযায়ী, পালিয়েছে যাওয়া কয়েদিদের মধ্যে একজন, আন্তোইন ম্যাসি, উইলিয়ামসকে পানি বন্ধ না করলে তার ওপর হামলার হুমকি দেয়।
এদিকে, এই ঘটনার তদন্তের অংশ হিসেবে, লুইজিয়ানা ডিপার্টমেন্ট অফ পাবলিক সেফটি অ্যান্ড কারেকশনস-এর পক্ষ থেকে অন্তত ১০ জন অভিজ্ঞ নিরীক্ষককে অরলিন্স জাস্টিস সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। নিরীক্ষা দলটি কারাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, জনবল এবং নীতিমালার ওপর বিশেষভাবে নজর রাখবে।
অন্যদিকে, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, অরলিন্স প্যারিশের শেরিফ সুসান হাটসন তার পুনর্নির্বাচন প্রচারণা স্থগিত করেছেন। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, “আমি সাময়িকভাবে আমার পুনঃনির্বাচন প্রচারণা স্থগিত করছি। আমি আপনাদের প্রয়োজনকে উপেক্ষা করে কোনো মুহূর্তে রাজনীতি করতে পারি না।”
বর্তমানে, এই ঘটনার তদন্ত চলছে এবং পলাতক কয়েদিদের খুঁজে বের করার জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। একইসঙ্গে, ঘটনার সাথে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনার জন্য কর্তৃপক্ষ কাজ করছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন