যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের নিউয়ার্ক বিমানবন্দরে কয়েক দিন ধরে চলা বিশৃঙ্খলার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে যোগাযোগ ও রাডার ব্যবস্থার ত্রুটি। গত সপ্তাহে ফিলাডেলফিয়ার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সেন্টারে (বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র) কারিগরি ত্রুটির কারণে বিমান চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে, যার ফলস্বরূপ হাজার হাজার যাত্রী দুর্ভোগে পড়েন এবং বহু ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, নিউয়ার্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা যোগাযোগ এবং রাডার পরিষেবা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এর ফলে, বিমানবন্দরের ভেতরে ও বাইরে ফ্লাইট পরিচালনা ব্যাহত হয়।
ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট, যা নিউ অরলিন্স থেকে নিউয়ার্কের উদ্দেশ্যে আসছিল, কন্ট্রোলারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া পায়নি। পরবর্তীতে, যোগাযোগ পুনরুদ্ধার হলেও বিমানবন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরিয়ে আনতে বেশ কয়েক দিন লেগে যায়।
এই ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার পুরাতন প্রযুক্তি এবং জনবলের অভাব ছিল। দেশটির পরিবহন মন্ত্রী শন ডাফি জানিয়েছেন, বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেমে এখনো পুরনো “ফ্লপি ডিস্ক” ও “তামার তার” ব্যবহার করা হয়, যা বর্তমান সময়ের বিমান চলাচলের জন্য যথেষ্ট নয়।
তিনি এই সমস্যা সমাধানে একটি আধুনিক ও উন্নত ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা বাস্তবায়নে প্রায় তিন থেকে চার বছর সময় লাগতে পারে।
এই ঘটনার ফলস্বরূপ, অনেক এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার মানসিক আঘাতের শিকার হন এবং তাদের কয়েকজনকে ছুটি নিতে হয়। ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) এর হিসাব অনুযায়ী, অন্তত পাঁচজন কর্মী মানসিক আঘাতের কারণে ৪৫ দিনের ছুটি নিয়েছেন।
এ ঘটনা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেছে।
বিমানবন্দরের এই বিশৃঙ্খলার কারণে যাত্রী সাধারণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ঘটনার দিন, ১৫০টির বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয় এবং আরও ৩৫০টির বেশি ফ্লাইট বিলম্বে ছাড়ে।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটঅ্যাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার নিউয়ার্ক থেকে আসা যাওয়া করা ফ্লাইটগুলো গড়ে প্রায় ৫ ঘণ্টা দেরিতে চলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার্স অ্যাসোসিয়েশন (National Air Traffic Controllers Association) এর মতে, বর্তমানে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারের সংখ্যা গত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে।
ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্কট কার্বি এই পরিস্থিতিকে কর্মীদের অভাব এবং ত্রুটিপূর্ণ সরঞ্জামের ফল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে বিমান চলাচলের নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। তবে, কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিমানবন্দর এখনো নিরাপদ রয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন এবং ফক্স নিউজ।