নিউ ইয়র্কের একজন মৌমাছি পালনকারী, যিনি কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, তার বিরুদ্ধে রুয়ান্ডার গণহত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের অনুমতি এবং নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার সময় গণহত্যার ভূমিকা গোপন করেছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌঁসুলিরা এই তথ্য জানিয়েছেন। ৬৫ বছর বয়সী ফাউস্টিন এনসাবুমুকুঞ্জিকে ভিসা জালিয়াতি এবং নাগরিকত্ব লাভের চেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডায় যখন গণহত্যা শুরু হয়েছিল, তখন এনসাবুমুকুঞ্জি সেখানকার একজন স্থানীয় নেতা ছিলেন। কৌঁসুলিদের ভাষ্যমতে, তিনি মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছে তার এই ভূমিকা গোপন করেছেন।
আদালতের নথিতে বলা হয়েছে, যখন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়, তখন তিনি বলেছিলেন, “আমি জানি, আমার সবকিছু শেষ।” রুয়ান্ডায় সংঘটিত এই গণহত্যায় প্রায় ৮ লাখ তুতসি সম্প্রদায়ের মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল।
মামলার প্রাথমিক শুনানিতে এনসাবুমুকুঞ্জি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। তাকে আড়াই লাখ মার্কিন ডলারের জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তবে, তাকে তার বাড়িতে নজরদারিতে থাকতে হবে এবং একটি জিপিএস মনিটরিং ডিভাইস পরতে হবে।
তিনি একজন মালী হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। এনসাবুমুকুঞ্জির আইনজীবী ইভান সুগার এক বিবৃতিতে বলেছেন, তার মক্কেল একজন “আইন-মান্যকারী মৌমাছি পালনকারী ও মালী”, যিনি দুই দশকের বেশি সময় ধরে লং আইল্যান্ডে বসবাস করছেন।
আইনজীবী আরও জানান, এনসাবুমুকুঞ্জি রুয়ান্ডার গণহত্যার শিকার, যেখানে তিনি তার পরিবারের অনেক সদস্য ও বন্ধুদের হারিয়েছেন। তিনি শরণার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় পাওয়ার যোগ্য ছিলেন এবং তিনি তার বিরুদ্ধে আনা “৩০ বছর আগের অভিযোগের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন।”
আদালতে জমা দেওয়া নথিতে কৌঁসুলিরা জানিয়েছেন, রুয়ান্ডায় গণহত্যার শুরুতে এনসাবুমুকুঞ্জি জনসাধারণের সামনে তুতসিদের বলেছিলেন যে তাদের রক্ষা করা হবে। কিন্তু, তিনি গোপনে হুতু সম্প্রদায়ের লোকেদের তুতসিদের হত্যা করতে উৎসাহিত করেছিলেন।
কৌঁসুলিরা আরও বলেছেন, সাক্ষীরা জানিয়েছেন, এনসাবুমুকুঞ্জি শুধু তুতসিদের হত্যাতেই অংশ নেননি, বরং তিনি হুতু পুরুষদের তুতসি নারীদের ধর্ষণ করতেও উৎসাহিত করেছিলেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এনসাবুমুকুঞ্জি বলেছিলেন, “আমি জানি, আমার সবকিছু শেষ।” অভিযোগনামা অনুযায়ী, রুয়ান্ডার একটি আদালত গণহত্যার দায়ে এনসাবুমুকুঞ্জিকে তার অনুপস্থিতিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি তার এলাকার তুতসিদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। গণহত্যার সময় তিনি তুতসিদের আটক ও হত্যার জন্য রাস্তা অবরোধ করেছিলেন এবং হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিলেন।
২০০৩ সালে এনসাবুমুকুঞ্জি শরণার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের জন্য আবেদন করেন। ২০০৭ সালে তিনি গ্রিন কার্ড পান এবং ২০০৯ ও ২০১৫ সালে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আবেদনে তিনি মিথ্যাভাবে বলেছিলেন যে, গণহত্যার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না।
মার্কিন বিচার বিভাগের অপরাধ বিভাগের প্রধান ম্যাথিউ গ্যালেত্তি এক বিবৃতিতে বলেছেন, এনসাবুমুকুঞ্জি “বিদেশে জঘন্য সহিংসতায় অংশ নিয়েছিলেন এবং পরে গ্রিন কার্ড ও নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য মিথ্যা বলেছেন।” তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান