যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত নিউ ইয়র্ক সিটির যানজট নিরসনে চালু করা একটি প্রকল্পের ওপর ফেডারেল সরকারের হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টা আপাতত বন্ধ করে দিয়েছে। আদালতের এই নির্দেশের ফলে শহরের ব্যস্ততম এলাকাগুলোতে যানজট ফি আদায়ের কার্যক্রম অন্তত আগামী ৯ই জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে।
দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এই প্রকল্পের বিরোধিতা করে আসছিল এবং এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল।
নিউ ইয়র্ক সিটির এই যানজট নিরসন প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো শহরের কেন্দ্রস্থলে যানবাহনের চাপ কমানো এবং গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে অর্থ সংগ্রহ করা। এই প্রকল্পের আওতায়, ম্যানহাটনের কিছু অংশে দিনের নির্দিষ্ট সময়ে গাড়ি প্রবেশ করলে চালকদেরকে ৯ ডলার (প্রায় ১০০০ টাকার সমান) ফি দিতে হয়।
এই ফি আদায়ের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ ব্যবহার করা হবে শহরের গণপরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণে, যেমন নতুন স্টেশন তৈরি এবং পরিবেশবান্ধব বাস পরিষেবা চালু করা।
আদালতের শুনানিতে বিচারক লুইস লিম্যান বলেছেন, এই প্রকল্পটি সফল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, রাজ্য, স্থানীয় ও ফেডারেল সংস্থাগুলো সমন্বিতভাবে এই পরিকল্পনা তৈরি করেছে।
আদালতের এই সিদ্ধান্তের ফলে রাজ্যের পরিবহন কর্তৃপক্ষের (MTA) কাছে প্রকল্পটি বহাল রাখার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এমটিএ হলো নিউ ইয়র্ক সিটির গণপরিবহন ব্যবস্থা পরিচালনা করার দায়িত্বে থাকা একটি সংস্থা।
আদালতের এই রায়ের পর নিউ ইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোকুল একে “বিরাট বিজয়” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “যানজট নিরসনের এই পরিকল্পনাটি আইনসম্মত এবং কার্যকরী। আমরা ট্রাফিক কমানো এবং গণপরিবহনে বিনিয়োগ করছি।”
যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন বিভাগের সেক্রেটারি শন ডাফি আগে বলেছিলেন যে, ফেডারেল সরকার এই প্রকল্পের অনুমোদন দিতে রাজি নয়। তবে আদালতের এই নির্দেশের কারণে আপাতত সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছে।
জানুয়ারিতে এই প্রকল্পটি চালু হওয়ার পর থেকেই ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছে। এক মাসের মধ্যে, সাবওয়েতে যাত্রী সংখ্যা ৬ শতাংশ এবং বাসে ৯ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে, শহরের যানজট ১১ শতাংশ কমেছে।
পরিবহন বিষয়ক একটি গবেষণা সংস্থা ‘রাইডার্স অ্যালায়েন্স’-এর পলিসি ও কমিউনিকেশন ডিরেক্টর ড্যানি পার্লস্টাইন মনে করেন, যানজট নিরসনের এই পদক্ষেপ সম্পূর্ণভাবে আইনসম্মত এবং এর বিরুদ্ধে বিরোধীদের আনা যুক্তিগুলো টেকে না।
নিউ ইয়র্ক রাজ্যে যানজট নিরসন প্রকল্পের এমন সাফল্যের প্রেক্ষাপটে অনেকে মনে করছেন, বাংলাদেশের শহরগুলোতেও যানজট কমাতে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। ঢাকার মতো জনবহুল শহরে যেখানে যানজট একটি নিত্যদিনের সমস্যা, সেখানে এই ধরনের ফি-ব্যবস্থা চালুর সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হতে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা
