নিউ ইয়র্কের রান্নার জগতে উদ্বাস্তু এবং অভিবাসীদের জন্য আশার আলো: এমা’স টর্চ।
নিউ ইয়র্ক শহর, যেখানে বিভিন্ন সংস্কৃতি আর স্বাদের এক অপূর্ব মিশ্রণ দেখা যায়, সেখানে আশ্রয়প্রার্থী ও অভিবাসীদের জন্য একটি বিশেষ স্থান তৈরি হয়েছে। এমা’স টর্চ নামের একটি রান্নার স্কুল তাদের জীবনকে নতুন করে সাজাতে সাহায্য করছে, যেখানে তারা শুধু রান্নার কৌশলই শেখে না, বরং একটি নতুন ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন দেখে।
সিএনএন-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্কুলের গল্পটি উদ্বাস্তু জীবনের কঠিন বাস্তবতা এবং ঘুরে দাঁড়ানোর অদম্য ইচ্ছার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
ব্রুকলিনের একটি লাইব্রেরি ক্যাফেতে আলফা ওউমার ডায়ালোর কথা ভাবুন। তিনি গিনি থেকে আসা একজন উদ্বাস্তু, যিনি এখন ব্রাউনি বানানোর চেষ্টা করছেন। তার শিক্ষক, শেফ অ্যাশলে ফিলস-এমে, তাকে ধৈর্য ধরে শেখাচ্ছেন।
ডায়ালোর চোখেমুখে লেগে আছে হারানোর বেদনা, কিন্তু তার হাতে তৈরি হচ্ছে নতুন জীবনের স্বপ্ন। গিনিতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ডায়ালোকে দেশ ছাড়তে হয়েছিল। সেখানে তিনি নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন এবং কারাবাসও করতে হয়েছে।
এরপর দীর্ঘ ও বিপদসংকুল পথ পাড়ি দিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। এখন, এমা’স টর্চে তিনি নতুন করে বাঁচতে শিখেছেন।
এমা’স টর্চ-এর প্রধান লক্ষ্য হল উদ্বাস্তু ও অভিবাসীদের খাদ্য তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া, যা তাদের আত্মনির্ভরশীল করে তোলে। এখানে তারা শুধু রান্নার কৌশলই শেখে না, বরং আমেরিকান সমাজে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু অর্জন করে।
এই স্কুলে আসা প্রত্যেকেরই একটি কঠিন অতীত আছে। জর্জিয়া থেকে আসা আনি সেৎস্খলাдзе-র কথাই ধরুন। তিনি তার স্বামীর সঙ্গে একটি উন্নত জীবনের আশায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা তাদের বাধ্য করে উদ্বাস্তু হতে।
এমা’স টর্চে তিনি নতুন করে জীবন খুঁজে পেয়েছেন, যেখানে তিনি রান্নাকে ভালোবাসেন এবং অন্যদের জন্য খাবার তৈরি করেন।
স্কুলটিতে বর্তমানে পাঁচশ জনের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের প্রশিক্ষণের জন্য অর্থায়ন করেন বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থা। এখানে শিক্ষার্থীদের শুধু রান্নার পদ্ধতি শেখানো হয় না, বরং তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা হয় এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থাও রয়েছে।
অভিবাসীদের জন্য এখানকার মেনুগুলোও বিশেষভাবে তৈরি করা হয়, যেখানে তাদের সংস্কৃতির প্রতি সম্মান জানানো হয়। মেনুতে বিভিন্ন দেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার পরিবেশন করা হয়, যা তাদের শিকড়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়।
এই স্কুলের আরেকজন শিক্ষার্থী হলেন ভিচেস্লাভ কোমোটপচিক, যিনি ইউক্রেন থেকে এসেছেন। যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে বাঁচতে পরিবারকে নিয়ে তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। এমা’স টর্চে তিনি নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন।
এই স্কুলের পরিবেশ তাদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল, যেখানে তারা তাদের অতীতের দুঃখ ভুলে ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে পারে।
নিউ ইয়র্ক শহরে উদ্বাস্তুদের জন্য এমন একটি আশ্রয়স্থল তৈরি করা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। এই ধরনের উদ্যোগ তাদের শুধু নতুন জীবন গড়তে সাহায্য করে না, বরং সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হতেও সহায়তা করে।
এমা’স টর্চ-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো দেখিয়ে দেয়, কীভাবে খাদ্য তৈরি এবং সংস্কৃতির মেলবন্ধন মানুষের জীবনকে বদলে দিতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন