আবহাওয়ার পরিবর্তনে দিশেহারা: টিকে থাকতে লড়াই, আঙুর বাগান মালিকদের ভবিষ্যৎ?

শিরোনাম: জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় টেকসই পদ্ধতির দিকে ঝুঁকছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আঙ্গুর বাগান, বাংলাদেশের জন্য কি কোনো শিক্ষা?

গত এক দশকে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব বিশ্বজুড়ে অনুভূত হচ্ছে, যার ফলস্বরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের কৃষি ক্ষেত্র। এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের আঙুর বাগানগুলো।

আবহাওয়ার পরিবর্তনশীলতা, যেমন অসময়ে বৃষ্টি, অতিরিক্ত গরম অথবা অপ্রত্যাশিত ঠান্ডা—এগুলো এখন তাদের উৎপাদনকে ঝুঁকিতে ফেলছে। ফলস্বরূপ, অনেক বাগান মালিক তাদের ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।

তবে, এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তারা পরিবেশ-বান্ধব এবং টেকসই পদ্ধতির দিকে ঝুঁকছেন, যা বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হতে পারে।

নিউ ইয়র্কের ফিঙ্গার লেকস অঞ্চলে ১৩০টিরও বেশি ওয়াইনারি বা মদ তৈরির কারখানা রয়েছে। এখানকার মনোরম দৃশ্য, স্বচ্ছ জলের হ্রদ আর সুস্বাদু সাদা ওয়াইনের জন্য এই স্থানটি সুপরিচিত।

কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখানকার আঙুর চাষ বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আবহাওয়ার পরিবর্তন হওয়ায়, আঙুরের ফলন কমে যাচ্ছে।

অনেক সময়, বসন্তকালে কুঁড়ি আসার পরে হঠাৎ করে ঠান্ডা পড়লে পুরো ফলন নষ্ট হয়ে যায়।

ফক্স রান ভিনিয়ার্ডের মালিক স্কট অসবর্ন বলছেন, “আগে আমি নতুন বাগান মালিকদের এই ব্যবসায় আসার জন্য উৎসাহিত করতাম। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন।

এখন আমি তাদের বলবো, তোমরা হয়তো ভুল পথে যাচ্ছো।

তিনি আরও যোগ করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আঙুর চাষ এখন অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে, অসবর্ন তার বাগানে সৌর প্যানেল স্থাপন করেছেন, যা তার খামারের প্রায় ৯০ শতাংশ বিদ্যুতের চাহিদা মেটায়।

মাটির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং পানির গুণগত মান বজায় রাখতেও তিনি কাজ করছেন।

শুধু ফক্স রান ভিনিয়ার্ড নয়, অনেকেই এখন টেকসই পদ্ধতির দিকে ঝুঁকছেন। এখানকার অন্য একটি বাগান, হান্ট কান্ট্রি ভিনিয়ার্ড, ভূগর্ভস্থ তাপীয় পাইপলাইন ব্যবহার করে গরম এবং ঠান্ডা করার ব্যবস্থা করছে।

তারা কম্পোস্টিং-এর মতো পদক্ষেপও নিয়েছে।

কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাদের উৎপাদনে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে, যার ফলস্বরূপ তারা এখন ওয়াইন উৎপাদন বন্ধ করে কর্মশালা আয়োজন এবং আঙুরের কিছু বিশেষ জাত বিক্রির কথা ভাবছেন।

তবে, এই পরিবর্তনের পেছনে কেবল জলবায়ু পরিবর্তনই একমাত্র কারণ নয়। একদিকে যেমন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনই ভোক্তাদের রুচিও পাল্টাচ্ছে।

তাছাড়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বাণিজ্য শুল্কের মতো বিষয়গুলোও তাদের ব্যবসার উপর প্রভাব ফেলছে।

উদাহরণস্বরূপ, কানাডা মার্কিন ওয়াইনের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যা তাদের বাজারে টিকে থাকার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

ফিনান্সিয়াল চ্যালেঞ্জের কারণে অনেক বাগান মালিক তাদের ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত।

অসবর্ন আশঙ্কা করছেন, সরকারি সহায়তা কমে গেলে তাদের পক্ষে টেকসই পদ্ধতিগুলো চালিয়ে যাওয়া কঠিন হবে।

সৌর প্যানেল বসানোর জন্য তিনি যে ট্যাক্স ক্রেডিট পেতেন, তা বন্ধ হয়ে গেলে তার খরচ অনেক বেড়ে যাবে।

এই পরিস্থিতিতে, স্থানীয় ওয়াইনারিগুলো টিকে থাকার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বিলসবোরো ওয়াইনারির মালিক ভিনি আলীপের্তি মনে করেন, পরিবেশ সুরক্ষার দিকে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া দরকার।

তিনি জানান, ভাঙা কাঁচের বোতল পুনর্ব্যবহার করার জন্য তিনি একটি ব্যবস্থা তৈরি করেছেন।

আলীপের্তি আরও মনে করেন, সরকারের উচিত পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া, অন্যথায় এই শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যাবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিজ্ঞতা থেকে, বিশেষ করে বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য অনেক কিছু শেখার আছে।

আমাদের দেশেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দৃশ্যমান।

ঘূর্ণিঝড়, বন্যা এবং খরা—এগুলো এখন নিয়মিত ঘটনা।

তাই, কৃষকদের টেকসই এবং পরিবেশ-বান্ধব চাষাবাদের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

সৌরশক্তি ব্যবহার, বৃষ্টির জল সংরক্ষণ, এবং জৈব সার ব্যবহার করার মতো পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে।

সরকারি সহায়তা এবং নীতি গ্রহণের মাধ্যমেও কৃষকদের এই পরিবর্তনে উৎসাহিত করা যেতে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় টেকসই কৃষি পদ্ধতি গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইনারিগুলোর এই প্রচেষ্টা, বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হতে পারে এবং আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

তথ্য সূত্র:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *