নিউজিল্যান্ডের পার্লামেন্টে আদিবাসী মাওরি আইনপ্রণেতাদের বিক্ষোভমূলক *হাকা* পরিবেশনের কারণে সাময়িক বরখাস্ত করার প্রস্তাব উঠেছে।
দেশটির একটি সরকারি কমিটি এই প্রস্তাব দিয়েছে। গত বছর এই ঘটনার জেরে তিনজন আইনপ্রণেতাকে বরখাস্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
বুধবার রাতে প্রিভিলেজ কমিটি জানায়, তে পাতি মাওরি পার্টির দুই নেতা ডেবি নগারওয়া-প্যাকার এবং রাওরি ওয়াইটিটি-কে ২১ দিনের জন্য বরখাস্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
এছাড়া, ২২ বছর বয়সী তরুণ আইনপ্রণেতা হানা-রাহুইতি মাইপি- ক্লার্ককে সাত দিনের জন্য বরখাস্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। তিনি নিউজিল্যান্ডের কনিষ্ঠতম আইনপ্রণেতা।
কমিটির মতে, তিনি এমনভাবে কাজ করেছেন যা “সংসদের একজন সদস্যকে ভয় দেখানোর মতো”। তবে, ক্লার্ক ক্ষমা চেয়ে চিঠি দেওয়ায় তার শাস্তির মেয়াদ কমিয়ে আনা হয়েছে।
সাধারণত, *হাকা* এবং মাওরি ঐতিহ্যবাহী নৃত্য ও গান পার্লামেন্টে পরিবেশন করা নতুন কিছু নয়।
তবে কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সদস্যদের আগে স্পিকারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হতো। নভেম্বরে, মাইপি- ক্লার্ক একটি বিতর্কিত বর্ণ সম্পর্ক বিলের প্রতিলিপি ছিঁড়ে ফেলেন এবং এর প্রতিবাদে *হাকা* পরিবেশন করেন। তার সঙ্গে যোগ দেন পার্টির দুই নেতা ওয়াইটিটি এবং নগারওয়া-প্যাকার।
মাওরি পার্টি এই বিলের বিরোধিতা করছিল। বিলটি নিউজিল্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা দলিল, ১৮৪০ সালের ব্রিটিশ ক্রাউন এবং আদিবাসী মাওরি নেতাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিটি (Treaty of Waitangi) নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করছিল।
সমালোচকরা মনে করেন, এই বিলের মাধ্যমে দেশটির মাওরি সম্প্রদায়ের বিশেষ অধিকারগুলো বাতিল করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
গত মাসে, বিলটি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে বাতিল হয়ে যায়। তবে মাওরি পার্টি এই সুপারিশকে দেশটির পার্লামেন্টের ইতিহাসে দেওয়া সবচেয়ে কঠোর শাস্তি হিসেবে অভিহিত করেছে।
তাদের মতে, এর আগে কোনো আইনপ্রণেতাকে সর্বোচ্চ তিন দিনের বেশি বরখাস্ত করা হয়নি। পার্টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “যখন আদিবাসী জনগণ (tangata whenua) প্রতিরোধ করে, ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো তখন সর্বোচ্চ শাস্তির আশ্রয় নেয়।
এটা আমাদের সবার জন্য সতর্কবার্তা।”
তবে প্রিভিলেজ কমিটির প্রধান এবং অ্যাটর্নি জেনারেল জুডিথ কলিন্স বলেছেন, ভোট গ্রহণের সময় সদস্যদের এমন আচরণ ছিল অত্যন্ত বিশৃঙ্খল।
তিনি আরও বলেন, “ভোট দেওয়ার অধিকার হলো একজন সংসদ সদস্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিতর্ক কক্ষে অন্য কোনো সদস্যের কাছে যাওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
আগামী মঙ্গলবার এই বরখাস্তের ওপর ভোট হওয়ার কথা রয়েছে এবং ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল জোটের সমর্থনে এটি পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা