নিউজিল্যান্ডে আদিবাসী অধিকার বিল বাতিল: এমপিদের উল্লাস, হাহাকার প্রতিপক্ষের!

নিউজিল্যান্ডে আদিবাসী অধিকার খর্ব করার প্রস্তাবনা বাতিল, উল্লাসে ফেটে পড়লেন রাজনীতিবিদরা।

নিউজিল্যান্ডে আদিবাসী মাওরি সম্প্রদায়ের অধিকার খর্ব করার আশঙ্কা থেকে বিতর্কিত একটি বিল অবশেষে বাতিল করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৩ মে) দেশটির পার্লামেন্টে ভোটাভুটির মাধ্যমে প্রস্তাবটি খারিজ হয়ে যায়, এরপর উল্লাসে ফেটে পড়েন বিভিন্ন দলের রাজনীতিবিদরা।

খবর অনুযায়ী, বিলটি বাতিলের পক্ষে ভোট পড়েছে ১১2টি, যেখানে বিপক্ষে ছিল মাত্র ১১টি ভোট।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের সঙ্গে মাওরি সম্প্রদায়ের স্বাক্ষরিত একটি ঐতিহাসিক চুক্তির শর্তাবলী নতুন করে নির্ধারণের লক্ষ্যে এই বিলটি আনা হয়েছিল। এই প্রস্তাবনার বিরুদ্ধে কয়েক সপ্তাহ ধরেই দেশটির রাস্তায় নেমে এসেছিলেন হাজার হাজার মানুষ, যাদের অধিকাংশই ছিলেন মাওরি সম্প্রদায়ের সদস্য।

বিলটি নিয়ে বিতর্ক যখন তুঙ্গে, তখন দেশটির পার্লামেন্টে এর প্রতিবাদে এক তরুণ এমপি বিলের কপি ছিঁড়ে ফেলেন এবং ঐতিহ্যবাহী ‘হাকা’ নৃত্য পরিবেশন করেন, যা বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।

ঐতিহাসিক ‘ওয়াইটাঙ্গি চুক্তি’র নীতিগুলো পুনর্বিবেচনার জন্যই মূলত এই বিলটি উত্থাপন করা হয়েছিল। ১৮৪০ সালে স্বাক্ষরিত এই চুক্তি নিউজিল্যান্ডকে ব্রিটিশ উপনিবেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে এবং মাওরিদের ভূমি ও ঐতিহ্য রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেয়।

প্রস্তাবটির মূল উদ্যোক্তা ছিলেন অ্যাক্ট পার্টির নেতা ডেভিড সেইমুর। তাঁর যুক্তি ছিল, আদালতের বিভিন্ন রায়ের মাধ্যমে চুক্তির নীতিগুলো যেভাবে নির্ধারিত হয়েছে, তার পরিবর্তে পার্লামেন্টের মাধ্যমে একটি সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা তৈরি করা প্রয়োজন।

সেইমুর মনে করতেন, বিদ্যমান আইন মাওরিদের কিছু বিশেষ সুবিধা দেয়, যা অন্যদের থেকে তাদের আলাদা করে।

তবে বিরোধীরা এই বিলের তীব্র বিরোধিতা করেন। তাঁদের মতে, আদালত ইতিমধ্যে চুক্তির মূলনীতিগুলো স্পষ্ট করেছে এবং সেইমুরের প্রস্তাবিত সংজ্ঞা আদিবাসী অধিকারকে দুর্বল করবে ও সামাজিক সংহতি বিনষ্ট করবে।

লেবার পার্টির এমপি উইলি জ্যাকসন বিলটিকে ‘ডানপন্থীদের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র’ হিসেবে অভিহিত করেন। এমনকি দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং লেবার পার্টির নেতা ক্রিস হিপকিন্স এই বিলটিকে ‘একটি নোংরা চুক্তি থেকে জন্ম নেওয়া ক্ষুদ্র বিল’ হিসেবে বর্ণনা করেন।

বিলটি উত্থাপনের ফলে ক্ষমতাসীন জোটের প্রধান দল ন্যাশনাল পার্টিকেও বেশ বেগ পেতে হয়। যদিও তারা বিলটিকে সমর্থন করতে বাধ্য হয়েছিল, তবে জনমতের চাপে শেষ পর্যন্ত তারা এর থেকে দূরত্ব বজায় রাখে।

তবে বিলটি বাতিল হওয়ার পরও সেইমুর তাঁর সিদ্ধান্তে অনড় থাকার কথা জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, জাতির ভিত্তিতে মানুষের জীবন নির্ধারণের ধারণা একটি বৃহত্তর সমস্যার অংশ।

বিলটি বাতিলের দিনটিকে মাওরি বিষয়ক মন্ত্রী তামা পোটাকা ‘অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দিন’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, বিলটি সম্পূর্ণরূপে বাতিল হয়েছে এবং এর সমাধিকরণ করা হবে।

তবে বিলটি নিয়ে বিতর্কের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতি সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। বিরোধীপক্ষের মতে, এত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর পার্লামেন্টে উপস্থিত থাকা উচিত ছিল।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *