নিউজিল্যান্ড পার্লামেন্ট: মৃত্যু, ভূত আর বিচিত্র ঘটনা!

নিউজিল্যান্ডের পার্লামেন্ট ভবনে ভুতুড়ে অভিজ্ঞতা: রহস্য আর ইতিহাসের সাক্ষী ওয়েলিংটনের প্রাসাদ।

ওয়েলিংটনের মনোরম পরিবেশে অবস্থিত নিউজিল্যান্ডের পার্লামেন্ট ভবন, যা শুধু দেশটির প্রশাসনিক কেন্দ্রই নয়, বরং ঐতিহাসিক নানা ঘটনার সাক্ষী। সম্প্রতি, এই ভবনে চালু হয়েছে এক বিশেষ ধরনের ভ্রমণ, যা দর্শকদের নিয়ে যায় এর অজানা, রহস্যময় জগতে।

ভিক্টোরিয়ান যুগের পোশাকে সজ্জিত গাইডরা এই ভ্রমণের নেতৃত্ব দেন, যেখানে উঠে আসে অপ্রত্যাশিত মৃত্যু, অলৌকিক ঘটনা, এবং ভুতুড়ে অভিজ্ঞতার গল্প।

পার্লামেন্ট ভবনের গ্রন্থাগার, যা উনিশ শতকের শেষের দিকে নির্মিত হয়েছিল, এই ভুতুড়ে গল্পের কেন্দ্রবিন্দু। স্থানীয়দের মধ্যে প্রচলিত আছে, এখানে মাঝেমধ্যে অদ্ভুত শব্দ শোনা যায়, যা রাতের বেলায় কর্মরত নিরাপত্তা কর্মী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের মধ্যে ভয়ের সৃষ্টি করে।

একসময় এই গ্রন্থাগার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বন্যার শিকার হয়েছিল, এমনকি বন্য বিড়ালের উপদ্রবও ছিল এখানে।

ভ্রমণের শুরুতেই, দর্শনার্থীদের এক গাইড জানান, “এটা আপনাদের শেষ সুযোগ, যদি ভয় পান তবে এখনই ফিরে যেতে পারেন।” এরপর, তারা প্রবেশ করেন এক গাঢ়, রহস্যময় পরিবেশে।

একসময় শোনা যায় গাইডদের আর্তচিৎকার, যা সংসদ ভবনের কর্মকর্তাদের অফিসের জানালা পর্যন্ত প্রতিধ্বনিত হয়। এই ভুতুড়ে ভ্রমণের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে, সাধারণত সংসদের অধিবেশন বন্ধ থাকার সময় বেছে নেওয়া হয়।

লাইব্রেরিতে প্রবেশ করার পর দর্শনার্থীরা দেখতে পান, পুরনো দিনের স্থাপত্যশৈলী, রঙিন কাঁচের জানালা, ঝাড়বাতি, লোহার কারুকার্য—যেন এক অন্য জগৎ। গাইডরা দর্শকদের শোনান লাইব্রেরির অতীতের নানান ঘটনা।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ১৮৯৮ সালে রাজনীতিবিদ উইলিয়াম লারনাকের রহস্যজনক মৃত্যু। শোনা যায়, আর্থিক ও পারিবারিক বিপর্যয়ের মধ্যে তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন, এবং তার আত্মা আজও নাকি এই ভবনে ঘুরে বেড়ায়।

এমনকি তার মাথার খুলি চুরির একটি গল্পও প্রচলিত আছে।

এছাড়াও, প্রথম পূর্ণ-কালীন লাইব্রেরিয়ান ইওইন ম্যাককলের কথা উল্লেখ করা হয়, যিনি অতিরিক্ত কাজের চাপে মারা গিয়েছিলেন বলে অনেকে মনে করেন।

ভ্রমণের সময়, দর্শকদের নিয়ে যাওয়া হয় বেসমেন্টে, যেখানে রয়েছে পুরনো নথিপত্র ও গোপনীয় তথ্য ভান্ডার। এই স্থানটি সম্পর্কে আরও গাঢ় রহস্য প্রচলিত আছে।

কর্মীদের মধ্যে প্রচলিত গল্প অনুযায়ী, এখানে নাকি বুক সেলফ থেকে হাত বের হয়ে আসে, বাথরুম থেকে ভেসে আসে গান, আয়নায় দেখা যায় নারীর প্রতিচ্ছবি, এমনকি বন্ধ দরজা আপনাআপনি খুলে যায়।

১৯৭৭ সালে এখানে বিড়ালের উপদ্রবের কথাও শোনা যায়।

এই ভুতুড়ে অভিজ্ঞতা শেষে, দর্শনার্থীরা কিছুটা ভীত অবস্থায় পার্লামেন্টের লবিতে ফিরে আসেন। তাদের মধ্যে একজন, যিনি ছোটবেলায়ও একবার পার্লামেন্ট ভবন পরিদর্শনে এসেছিলেন, জানান, “ভ্রমণটি আমার ধারণার চেয়ে অনেক বেশি ভুতুড়ে ছিল। এখানে যে এত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তা আগে আমার জানা ছিল না।”

আরেকজন দর্শনার্থী, এই ভবনে কাজ করা মানুষের গল্প জানতে পেরে মুগ্ধ হন।

পরিশেষে, গাইডরা জানান, তাদের নিয়মিত ভ্রমণে ফিরে গেলেও, ভবনের ভুতুড়ে দিকটি সবসময় তাদের সঙ্গেই থাকে।

তথ্য সূত্র: Associated Press

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *