নিউজিল্যান্ডের পার্লামেন্টে আদিবাসী চুক্তি বিষয়ক একটি বিতর্কিত বিল বাতিল হয়ে গেছে, যা মাওরি সম্প্রদায়ের অধিকারের ওপর প্রভাব ফেলতে চেয়েছিল। এই বিলটি বাতিলের দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ ও জনমত তৈরি হয়, যা নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
বিলটি ছিল ‘ট্রিটি প্রিন্সিপালস বিল’ নামে পরিচিত। এটি নিউজিল্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা চুক্তি, ‘ওয়াইতাঙ্গি চুক্তি’-কে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করার প্রস্তাব করেছিল। এই চুক্তির মাধ্যমে মাওরি এবং ব্রিটিশ ক্রাউনের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছিল। বিলটি আইনে পরিণত হলে মাওরি সম্প্রদায়ের অধিকার দুর্বল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল, যা তাদের প্রতি বৈষম্য সৃষ্টি করতে পারতো।
বিলটি উত্থাপন করে একটি ছোট রাজনৈতিক দল, ‘অ্যাক্ট পার্টি’। তারা যুক্তি দেয় যে, মাওরিদের বিশেষ রাজনৈতিক ও আইনি সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যা অন্যান্য নিউজিল্যান্ডবাসীর তুলনায় বেশি। তবে, বিলটির বিরোধীরা মনে করেন, এটি মাওরিদের অধিকার খর্ব করবে এবং তাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াবে।
বিলটি নিয়ে সংসদে বিতর্কের সময় প্রতিবাদকারীরা এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। এমনকি, একজন বিক্ষোভকারী অধিবেশন চলাকালীন বক্তব্য থামিয়ে দেন, যার ফলশ্রুতিতে তাকে সরিয়ে নেওয়া হয়। বিলটির বিরুদ্ধে সংসদে ১১ জন ভোট দিলেও, এর বিপক্ষে ভোট দেন ১১২ জন সংসদ সদস্য। এর মাধ্যমে বিলটি বাতিল হয়ে যায়।
এই বিল নিয়ে বিতর্কের সময় আদিবাসী মাওরি সম্প্রদায়ের মানুষজন তাদের অধিকার রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ হন। এই বিলের বিরুদ্ধে সংসদে একটি ‘হাকা’ পরিবেশন করা হয়, যা মাওরি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া, বিলের বিরুদ্ধে প্রায় তিন লক্ষ মানুষের স্বাক্ষর সংবলিত একটি আবেদন জমা দেওয়া হয়, যা নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে একটি রেকর্ড।
বিলটি বাতিলের পর মাওরি সম্প্রদায়ের নেতারা একে তাদের জয় হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন, এই বিল তাদের অধিকারের প্রতি হুমকি স্বরূপ ছিল, যা বাতিল হওয়ায় তারা স্বস্তি পেয়েছেন। তবে, তাদের অধিকারের লড়াই এখনো শেষ হয়নি। তারা সরকারের বিভিন্ন নীতির সমালোচনা করে আসছেন, যা তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং ভাষার ওপর প্রভাব ফেলছে।
সরকার জানিয়েছে, তারা সবার জন্য সুযোগ তৈরি করতে চায়, কোনো জাতিগোষ্ঠীর প্রতি পক্ষপাতিত্ব তাদের কাম্য নয়। তবে, মাওরি সম্প্রদায়ের নেতারা মনে করেন, সরকারের কিছু নীতি তাদের অধিকারকে দুর্বল করে দিচ্ছে। তাদের মতে, এই বিল বাতিলের মাধ্যমে তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ জয় পেলেও, তাদের লড়াই এখনো অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান