যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিমানবন্দরে ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত এক সাংবাদিককে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি নিউইয়র্কের নিউয়ার্ক বিমানবন্দরে এই ঘটনা ঘটে।
ওই সাংবাদিক ও তার জার্মান স্বামীর জিজ্ঞাসাবাদ এবং তাদের জিনিসপত্র তল্লাশি করা হয়। খবরটি প্রকাশ করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ওই নারী সাংবাদিক দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনিদের অধিকার নিয়ে কাজ করেন। জার্মানে বসবাস করা এই সাংবাদিক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় বিমানবন্দরে তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়।
বিমানবন্দরে তাদের দীর্ঘ সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং তাদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্রও পরীক্ষা করা হয়।
ওই সাংবাদিক জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির (DHS) কর্মকর্তারা তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা জানতে চান, কেন তারা যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন এবং তাদের গাজায় যাওয়ার কারণ কি ছিল।
এমনকি, গাজায় তারা কাদের সঙ্গে দেখা করেছেন এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে কোথায় আছেন, সে বিষয়েও প্রশ্ন করা হয়।
সাংবাদিক জানান, কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের ধরন দেখে মনে হয়েছে, তারা তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইছে। বিশেষ করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা, সে বিষয়ে তারা জানতে চেয়েছিলেন।
ওই নারী সাংবাদিক জানান, তার পরিবারের ৫০ জনের বেশি সদস্য গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন। কর্মকর্তাদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইসরায়েলি সেনারা তো ২০২২ সালে গাজায় ছিল না।
তখন তারা কেন এমন প্রশ্ন করলেন, তা বোধগম্য ছিল না। সাংবাদিকের অভিযোগ, তাকে ও তার স্বামীকে হয়রানি করার মূল উদ্দেশ্য ছিল ভীতি প্রদর্শন এবং তাদের কণ্ঠরোধ করা।
কারণ, তারা ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে কথা বলেন। ওই সাংবাদিক আরও জানান, তাদের ফোন পরীক্ষা করার পর কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে একটি সতর্কবার্তা দেওয়া হয়।
তাদের বলা হয়, ভবিষ্যতে যেন কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তারা জড়িত না হন। বিষয়টি নিয়ে আইনি পরামর্শ নেওয়ার পর ওই সাংবাদিককে কোনো ধরনের প্রতিবাদ বা বিক্ষোভে অংশ না নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওই সাংবাদিক বলেন, “আমাদের পাসপোর্ট তো কেবল কাগজ, আর আমাদের ফোনগুলো ধাতু ও কাঁচের তৈরি। এগুলো তারা নিতে পারে, ভাঙতে পারে।
কিন্তু আমাদের কণ্ঠ, আমাদের স্মৃতি, এবং ন্যায়বিচারের প্রতি আমাদের অঙ্গীকার—এগুলো তারা কেড়ে নিতে পারবে না।
ওই সাংবাদিক মনে করেন, গাজায় যা ঘটছে, তার তুলনায় বিমানবন্দরে তাদের সঙ্গে হওয়া ঘটনা কিছুই নয়।
এই ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে, ওই সাংবাদিকের স্বামী জানান, গাজায় তার পরিবারের সদস্য ও ফিলিস্তিনি জনগণের জীবন ও স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।
এর বাইরে অন্য কোনো বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে রাজি নন। প্রকাশিত খবরটিতে আরও বলা হয়েছে, এই নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব এবং তা আল জাজিরার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নাও হতে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা