বদলে যাচ্ছে নেক্সটডোর! স্থানীয় সংবাদের সাথে জোট, ফিরে আসার চেষ্টা

যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, নেক্সটডোর, স্থানীয় খবর সরবরাহকারীদের সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে তাদের প্ল্যাটফর্মকে নতুন করে সাজানোর চেষ্টা করছে। এই পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য হলো ব্যবহারকারীদের কাছে আরও প্রাসঙ্গিক খবর পরিবেশন করা এবং একইসাথে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের টিকে থাকার লড়াইয়ে সহায়তা করা।

নেক্সটডোর মূলত একটি প্রতিবেশী-কেন্দ্রিক সামাজিক মাধ্যম। ব্যবহারকারীরা এখানে তাদের এলাকার মানুষের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারে। কিন্তু ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমে যাওয়া, বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য এবং প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবের কারণে প্ল্যাটফর্মটি তার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছিল।

এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে এবং ব্যবহারকারীদের ধরে রাখতে নেক্সটডোর এখন পেশাদার সাংবাদিকদের দ্বারস্থ হয়েছে।

এই অংশীদারিত্বের ফলে, নেক্সটডোর ব্যবহারকারীরা এখন তাদের এলাকার স্থানীয় খবরের অংশবিশেষ সরাসরি অ্যাপে দেখতে পারবে। খবরগুলো জানার জন্য সংবাদ সাইটে যাওয়ারও সুযোগ থাকবে। এই মুহূর্তে, নেক্সটডোরে প্রায় ৫০,০০০-এর বেশি স্থানীয় খবর উপলব্ধ রয়েছে, যা অ্যাপের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ এলাকার প্রতিনিধিত্ব করে।

তবে, নেক্সটডোরের এই উদ্যোগের পেছনের গল্পটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ২০১১ সালে নেক্সটডোরের যাত্রা শুরু হওয়ার সময়, স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের অবস্থা ভালো ছিল না। সংবাদপত্রের পাঠক সংখ্যা কমছিল এবং বিজ্ঞাপনদাতারাও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিকের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে, নেক্সটডোর স্থানীয় খবরের জন্য একটি সহায়ক প্ল্যাটফর্ম হতে পারতো।

কিন্তু শুরুতে, নেক্সটডোর কর্তৃপক্ষ পেশাদার সাংবাদিকদের যুক্ত করার কথা সেভাবে ভাবেনি। তাদের ধারণা ছিল, প্রতিবেশীরাই স্থানীয় খবরের চাহিদা পূরণ করতে পারবে।

তবে, সময়ের সাথে সাথে তারা বুঝতে পেরেছে যে, ব্যবহারকারীদের তৈরি করা তথ্যের মান, সময়ানুবর্তিতা এবং প্রাসঙ্গিকতার ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

শুধু তাই নয়, নেক্সটডোর কিছু ক্ষেত্রে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য এবং বিভ্রান্তিকর তথ্যেরও শিকার হয়েছে। প্ল্যাটফর্মের কিছু ব্যবহারকারী বিভিন্ন ধরনের হয়রানিমূলক মন্তব্য করতেন, যা নিয়ন্ত্রকদের জন্য সমস্যা তৈরি করেছে।

অনেক ব্যবহারকারীর মতে, ভালো দিকের চেয়ে খারাপ দিকগুলোই যেন তাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।

নেক্সটডোরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, নিরাভ তোলিয়ার মতে, এই প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহারকারীদের দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য করে তোলাই তাদের লক্ষ্য। বর্তমানে, নেক্সটডোরের প্রায় ১০ কোটি নিবন্ধিত ব্যবহারকারী থাকলেও, তাদের মধ্যে মাত্র আড়াই কোটি নিয়মিতভাবে এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে।

তাই, ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য এই নতুন কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে।

নেক্সটডোর কর্তৃপক্ষের মতে, ব্যবহারকারীরা তাদের এলাকার বাইরেও আরো অনেক কিছু জানতে চায়। অন্য সামাজিক মাধ্যমগুলোও এখন বাইরের তথ্য যুক্ত করছে।

সাবেক ‘মিট দ্য প্রেস’ উপস্থাপক, চাক টড মনে করেন, নেক্সটডোরের উচিত শুধু ট্রাফিকের পেছনে না ছুটে খবরের গুণগত মানের দিকে নজর দেওয়া।

এই মুহূর্তে, স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো কঠিন সময় পার করছে। একদিকে পাঠক ও বিজ্ঞাপনদাতার সংখ্যা কমছে, অন্যদিকে গুগল এবং ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো খবর পরিবেশনে তাদের গুরুত্ব কমিয়ে দিচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে, নেক্সটডোর যদি সত্যিই স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোর জন্য একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে পারে, তবে তা তাদের টিকে থাকার লড়াইয়ে সহায়ক হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশেও যদি এমন কোনো প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা যায়, যা স্থানীয় খবরের প্রচার ও প্রসারে সাহায্য করে, তবে তা একদিকে যেমন সংবাদ মাধ্যমের জন্য উপকারী হবে, তেমনি স্থানীয় জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতেও সহায়ক হবে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *