যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের একটি বেসবল খেলায় জাতীয় সঙ্গীত স্প্যানিশ ভাষায় পরিবেশন করে অভিবাসন নীতির প্রতিবাদ জানিয়েছেন নেজ্জা নামের এক শিল্পী। খেলা পরিচালনাকারীদের আপত্তির পরেও তিনি এই কাজটি করেন। সম্প্রতি, দেশটির বিভিন্ন স্থানে অভিবাসন বিষয়ক নীতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে।
সংবাদ সংস্থা সিএনএন-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, নেজ্জা (ওরফে ভানেসা হার্নান্দেজ) লস অ্যাঞ্জেলেস ডজার্স দলের খেলা শুরুর আগে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার কথা ছিল। প্রথমে তিনি স্প্যানিশ এবং ইংরেজি, উভয় ভাষায় গানটি গাইতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু অভিবাসন বিরোধী অভিযানের প্রেক্ষাপটে, তিনি পুরো গানটি স্প্যানিশ ভাষায় পরিবেশন করেন।
নেজ্জা জানান, খেলা কর্তৃপক্ষের এক কর্মচারী তাকে বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানালেও তিনি তাঁর সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমার মনে হয়নি এতে কোনো সমস্যা আছে। আমি চেয়েছিলাম, যারা এই নীতির শিকার, তাদের প্রতি সমর্থন জানাতে।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে শোনা যায়, ডজার্সের ওই কর্মচারী নেজ্জাকে বলছেন, “আজ আমরা গানটি ইংরেজিতে পরিবেশন করব, বিষয়টি হয়তো আপনার কাছে জানানো হয়নি।” টিকটকে শেয়ার করার পর ভিডিওটি এক কোটি ২০ লক্ষেরও বেশিবার দেখা হয়েছে।
খেলা শুরুর দুই সপ্তাহ আগে নেজ্জা ও তাঁর দল ডজার্স কর্তৃপক্ষের কাছে ইমেইল করে জাতীয় সঙ্গীতটি দুই ভাষায় গাওয়ার অনুমতি চেয়েছিলেন। নেজ্জা বলেন, “ঘটনাগুলো যখন ঘটতে শুরু করে এবং খেলার দিন ঘনিয়ে আসে, তখন আমি পুরো গানটি স্প্যানিশে গাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।”
ডজার্স কর্তৃপক্ষ তাঁদের উত্তরে গানের নিয়মাবলী সংবলিত একটি পিডিএফ ফাইল পাঠায়, তবে তাঁর অনুরোধে সরাসরি কোনো ‘না’ বলেনি। নেজ্জা তাঁর ব্যবস্থাপকদের মাধ্যমে পাঠানো ইমেইলে গানের প্রেক্ষাপট এবং কেন তিনি এই সংস্করণটি পরিবেশন করতে চান, সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছিলেন।
জানা যায়, গানটির স্প্যানিশ সংস্করণটির নাম ‘এল পেন্ডন এস্ট্রেলাদো’। ১৯৪৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর সাংস্কৃতিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে ‘স্টার স্প্যাঙ্গেলড ব্যানার’-এর স্প্যানিশ ও পর্তুগিজ ভাষায় অনুবাদ চেয়েছিল।
গানের পরিবেশনার পর, ডজার্সের ওই কর্মচারী নেজ্জার ব্যবস্থাপককে ফোন করে জানান যে, ভবিষ্যতে যেন তাঁদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না করা হয় এবং নেজ্জাকে আর আমন্ত্রণ জানানো হবে না।
যদিও ডজার্স কর্তৃপক্ষ সিএনএন-এর প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর দেয়নি, তবে এক বিবৃতিতে তারা জানায়, নেজ্জার পরিবেশনা নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো ‘মনোমালিন্য’ হয়নি।
নেজ্জা জানিয়েছেন, দলের পক্ষ থেকে তাঁর সঙ্গে এখনো কেউ যোগাযোগ করেনি এবং তিনি ভবিষ্যতে আর খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে যাবেন না। তিনি বলেন, “আমি মনে করি না, সেখানে আমার আর যাওয়ার কোনো প্রয়োজন আছে।”
নেজ্জার বাবা-মা কলম্বিয়া ও ডমিনিকান রিপাবলিক থেকে আসা অভিবাসী, যারা পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। নেজ্জা জানান, তাঁর বাবা-মা তাঁর এই পদক্ষেপে খুবই আনন্দিত।
অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে নেজ্জা এই কাজটি করেছেন। তাঁর মতে, গানের কথা একই ছিল এবং তিনি একজন গর্বিত আমেরিকান হিসেবেই গানটি গেয়েছেন।
এই ঘটনার দিনটিতে, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ‘নো কিংস’ প্রতিবাদের অংশ হিসেবে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। লস অ্যাঞ্জেলেসেও অভিবাসন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)-এর অভিযানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।
ডজার্সের খেলোয়াড় কিকে হার্নান্দেজ, যিনি পুয়ের্তো রিকোর নাগরিক, লস অ্যাঞ্জেলেসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তাঁর ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্ট করেছেন। তিনি লেখেন, “আমার দেশ ও শহরে যা ঘটছে, তাতে আমি দুঃখিত ও ক্ষুব্ধ। লস অ্যাঞ্জেলেস এবং ডজার্সের ভক্তরা আমাকে স্বাগত জানিয়েছে, সমর্থন করেছে এবং ভালোবাসা দিয়েছে।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন