এনএফএলে প্রথম, মাঠে নামার আগেই ইতিহাস! বিস্ময়কর ঘটনা

খেলাধুলার জগতে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা ইতিহাস তৈরি করে, আবার কিছু ঘটনা বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যায়।

আমেরিকান ফুটবলের জগৎ-এও এর ব্যতিক্রম হয়নি।

১৯৩৬ সালের কথা, যখন ন্যাশনাল ফুটবল লীগ (NFL)-এর প্রথম ড্রাফট অনুষ্ঠিত হয়।

সেই ড্রাফটে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের হাফব্যাক (আক্রমণভাগের খেলোয়াড়) জে বারওয়াঙ্গার।

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, তিনি পেশাদার ফুটবল খেলেননি!

বারওয়াঙ্গার ছিলেন সেই সময়ের কলেজ ফুটবলের উজ্জ্বল নক্ষত্র।

৬ ফুট উচ্চতা এবং ১৯৫ পাউন্ড ওজনের এই খেলোয়াড় তার অসাধারণ দক্ষতার জন্য সবার কাছে পরিচিত ছিলেন।

১৯৩৫ সালে তিনি প্রথম হেইজম্যান ট্রফি (সেরা কলেজ ফুটবল খেলোয়াড়কে দেওয়া পুরস্কার) জেতেন।

একই বছর শিকাগো ট্রিবিউন তাকে ‘বর্ষসেরা খেলোয়াড়’ হিসেবেও সম্মানিত করে।

আক্রমণ, রক্ষণ এবং বিশেষ দল—সব বিভাগেই তিনি ছিলেন অপরিহার্য।

এমনকি দলের কিকিংয়ের দায়িত্বও সামলাতেন তিনিই।

বারওয়াঙ্গারের খেলা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলোয়াড় এবং পরবর্তীকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডও।

ফোর্ড একবার বলেছিলেন, বারওয়াঙ্গারকে ট্যাকল করতে গিয়ে তার চোয়ালে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল।

বারওয়াঙ্গারের অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বীকৃতিস্বরূপ, নিউইয়র্কের একটি অ্যাথলেটিক ক্লাব তাকে প্রথম ‘মিসিসিপি নদীর পূর্বে সেরা খেলোয়াড়’-এর পুরস্কার দেয়।

তবে, পেশাদার ফুটবল খেলার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পেছনে ছিল অন্য কারণ।

১৯৩৬ সালের ড্রাফটে তাকে ফিলাডেলফিয়া ঈগলস দল প্রথম বাছাই করে, কিন্তু পরে তার অধিকার বিক্রি করা হয় শিকাগো বিয়ার্স-এর কাছে।

বারওয়াঙ্গার তখন তার পারিশ্রমিক হিসেবে দুই বছরের জন্য ২৫,০০০ ডলার দাবি করেন।

সেই সময়ে এই পরিমাণ অর্থ ছিল অনেক বেশি, কিন্তু সেই যুগে পেশাদার ফুটবলে খেলোয়াড়দের আর্থিক নিশ্চয়তা ছিল না।

কারণ, সেসময় আমেরিকায় মহামন্দা (Great Depression) চলছিল।

বারওয়াঙ্গার বুঝতে পেরেছিলেন, ফুটবল খেলে হয়তো তার ভবিষ্যৎ ততটা উজ্জ্বল হবে না, যতটা উজ্জ্বল হতে পারে পড়াশোনা করে অন্য কোনো পেশায় গেলে।

বারওয়াঙ্গারের এই সিদ্ধান্ত হয়তো অনেকের কাছে বিস্ময়কর মনে হতে পারে।

কারণ, আজকের দিনে NFL ড্রাফট একটি বিশাল ইভেন্ট, যেখানে প্রথম বাছাই হওয়া খেলোয়াড়রা বিশাল অঙ্কের চুক্তিতে স্বাক্ষর করে জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

কিন্তু বারওয়াঙ্গারের সময়ে পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন।

তিনি খেলোয়াড় হিসেবে খ্যাতি পাওয়ার পরেও, পেশাদার ফুটবলকে বেছে নেননি।

পরবর্তীতে তিনি ফোম রাবার ও প্লাস্টিকের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন এবং সেখানেও সফল হন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তিনি নৌবাহিনীর ফ্লাইট প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন।

বারওয়াঙ্গার হয়তো পেশাদার ফুটবল খেলেননি, কিন্তু তার নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

তিনি ছিলেন NFL-এর প্রথম ড্রাফট বাছাই, যিনি খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামতে পারেননি।

খেলাধুলার জগতে এমন অনেক গল্প আছে, যা আমাদের নতুন করে ভাবতে শেখায়—সুযোগের সঠিক মূল্যায়ন এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *