শেষ হয়েও হইছে শুরু! এনএফএল-এর ‘মিস ইরেলেভেন্ট’ হওয়ার আসল মজা!

শিরোনাম: ‘মিস’ হওয়াও যেন এক বিরাট পাওয়া: আমেরিকান ফুটবলে ‘মিস ইরেলেভেন্ট’-এর গল্প

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমেরিকান ফুটবল একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় খেলা। প্রতি বছর এই খেলার জন্য খেলোয়াড় বাছাইয়ের প্রক্রিয়া চলে, যেখানে সবার শেষে যিনি নির্বাচিত হন, তাকে দেওয়া হয় ‘মিস ইরেলেভেন্ট’-এর খেতাব।

শুনতে কিছুটা বিদ্রূপাত্মক শোনালেও, এই ‘মিস ইরেলেভেন্ট’ হওয়াটা যেন খেলোয়াড়দের জন্য অন্যরকম এক সম্মানের বিষয়।

আসলে, এই খেতাব জয়ীর জন্য অপেক্ষা করে থাকে এক বিশেষ অভিজ্ঞতা।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার নিউপোর্ট বিচে আয়োজন করা হয় ‘ইরেলেভেন্ট উইক’ নামে এক বর্ণাঢ্য উৎসব। এখানে প্যারেড থেকে শুরু করে ভোজসভা, এমনকি গলফ টুর্নামেন্টেরও আয়োজন করা হয়।

নবনির্বাচিত ‘মিস ইরেলেভেন্ট’-কে দেওয়া হয় রাজকীয় সম্মান।

এই উৎসবের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন পল সালাটা। খেলোয়াড় জীবনে তিনি তেমন পরিচিতি না পেলেও, ১৯৭৬ সালে তিনি এমন একটি ধারণা নিয়ে আসেন, যা আজও ক্রীড়ামোদী মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয়।

তাঁর মতে, খেলার জগতে যারা একটু পিছিয়ে পড়েন, তাঁদেরও উৎসাহিত করা উচিত। তাই তিনি ‘মিস ইরেলেভেন্ট’-এর ধারণা নিয়ে আসেন।

তাঁর এই উদ্যোগের ফলে, সবার শেষে নির্বাচিত হওয়া খেলোয়াড়রাও পরিচিতি পান এবং তাঁদের প্রতি সম্মান জানানো হয়।

২০২৩ সালের ‘মিস ইরেলেভেন্ট’ নির্বাচিত হয়েছিলেন কোবি মাইনর।

তাঁর জন্যেও এমন উৎসবের আয়োজন করা হবে।

খেলোয়াড় নির্বাচনের এই প্রক্রিয়ায় সবার শেষে সুযোগ পাওয়া খেলোয়াড়দের অনেকেই হয়তো শুরুতে হতাশ হন, কিন্তু পরে তাঁরা বুঝতে পারেন, এই খেতাব তাঁদের জন্য খুলে দিয়েছে সাফল্যের এক নতুন দিগন্ত।

এই প্রসঙ্গে, ২০০৩ সালের ‘মিস ইরেলেভেন্ট’ নির্বাচিত হওয়া রাইয়ান হোগের কথা বলা যায়।

তিনি জানান, যখন তাঁর নাম ঘোষণা করা হয়নি, তখন তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন।

কিন্তু পরে যখন তাঁকে এই খেতাব দেওয়া হয়, তখন তাঁর মনে হয়েছিল, যেন তিনি সুপার বোল জিতেছেন!

এই ঘটনার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, এই সময়ে তাঁর পরিবারকে রাজার মতো সম্মান দেওয়া হয়েছিল।

‘ইরেলেভেন্ট উইক’-এর আকর্ষণ শুধু উৎসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।

এই সময়ে খেলোয়াড়দের জন্য বিভিন্ন আকর্ষণীয় অভিজ্ঞতাও অপেক্ষা করে।

তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলো, সমুদ্রের ধারে সার্ফিং শেখা, বিভিন্ন সেলিব্রেটিদের সঙ্গে দেখা করা, এমনকি স্বপ্নের গাড়ি চালানোও তাঁদের জন্য সাধারণ একটা বিষয়।

আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, ‘মিস ইরেলেভেন্ট’ হওয়াটা অনেক খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ারের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ হয়েছে।

১৯৯৪ সালের ‘মিস ইরেলেভেন্ট’ মার্টি মুর ২০০২ সালে টম ব্র্যাডির সঙ্গে প্রথম সুপার বোল জেতেন।

এছাড়া, ২০১২ সালের ‘মিস ইরেলেভেন্ট’ ব্রক পার্ডি-ও কয়েক বছর পরেই সুপার বোলে খেলার সুযোগ পান।

এই ঘটনার মাধ্যমে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়, খেলার জগতে সাফল্যের জন্য শুধুমাত্র প্রথম সারিতে থাকতে হয় না।

কঠোর পরিশ্রম, একাগ্রতা এবং সুযোগের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে যে কেউ তাঁর লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে।

‘মিস ইরেলেভেন্ট’-এর ধারণা শুধু একটি খেতাব বা উৎসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি একটি অনুপ্রেরণা।

সমাজের চোখে যারা পিছিয়ে পড়া, তাঁদেরও যে সম্ভাবনা রয়েছে, এই ধারণা তারই প্রমাণ।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *