প্রখ্যাত সাহিত্যিক নগুগি ওয়া থিয়োংও: ৮৭ বছর বয়সে জীবনাবসান

আফ্রিকার প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও ঔপনিবেশিকতা-উত্তর যুগের লেখক, অধ্যাপক ও সমাজকর্মী, এবং কেনিয়ার উজ্জ্বল নক্ষত্র, Ngugi wa Thiong’o, ৮৭ বছর বয়সে জীবনাবসান করেছেন। বুধবার তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে এই দুঃখজনক খবরটি জানানো হয়। জানা গেছে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনির অসুস্থতায় ভুগছিলেন।

Ngugi wa Thiong’o ১৯৩৮ সালে কেনিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জীবন ছিল বর্ণাঢ্য এবং সংগ্রামের। ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে তাঁর কণ্ঠ ছিল সোচ্চার। তিনি ছিলেন একজন লেখক, যিনি তাঁর লেখনীর মাধ্যমে নিপীড়িত মানুষের কথা তুলে ধরেছেন।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে, এমনকি কেনিয়ার স্বাধীনতার পরেও সমাজের নানা অসঙ্গতি নিয়েও তিনি কলম ধরেছেন। তাঁর কাজের মূল বিষয় ছিল ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং মানুষের আত্মপরিচয়ের অনুসন্ধান।

Ngugi wa Thiong’o-র সাহিত্যচর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, ইংরেজি ভাষার পরিবর্তে তিনি তাঁর মাতৃভাষা কিকুয়ু এবং সোয়াহিলি ভাষায় লেখা শুরু করেন। ১৯৭০-এর দশকে তাঁর এই সিদ্ধান্তটি বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। অনেকে তাঁর এই পদক্ষেপকে সাহসী এবং যুগান্তকারী হিসেবে বিবেচনা করেছেন।

তাঁর এই সিদ্ধান্ত ভাষার প্রতি গভীর ভালোবাসার প্রমাণ বহন করে। তিনি বিশ্বাস করতেন, নিজেদের সংস্কৃতিকে জানতে হলে, মাতৃভাষায় সাহিত্যচর্চা করা অপরিহার্য। তাঁর বিখ্যাত একটি কাজ হলো “Decolonising the Mind”, যেখানে তিনি ভাষার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি যুক্তি দেন, “যে ভাষায় নিপীড়ন চলে, সেই ভাষায় মুক্তি অর্জন করা অসম্ভব।”

Ngugi wa Thiong’o শুধু লেখক ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন সংগ্রামী মানুষ। ১৯৭৭ সালে কেনিয়ার তৎকালীন সরকারের সমালোচনা করে একটি নাটক মঞ্চস্থ করার কারণে তাঁকে কারাগারে যেতে হয়েছিল। সমাজের প্রভাবশালী শ্রেণির সমালোচনা করে তিনি বলেছিলেন, “এই শ্রেণির উত্থান মানে হলো আশা, স্বপ্ন এবং সৌন্দর্যের মৃত্যু।”

১৯৮২ সালে, তাঁর দেশে নাট্য সংগঠন ও পরিবেশনার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে, তিনি আত্ম-নির্বাসনে যান। প্রথমে যুক্তরাজ্যে এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রে তিনি বসবাস করেন। সেখানে তিনি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন এবং কেনিয়ার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখালেখি অব্যাহত রাখেন।

Ngugi wa Thiong’o-র প্রয়াণে সাহিত্য জগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কেনিয়ার বিরোধী দলের নেতা মারথা কারুয়া শোক প্রকাশ করে বলেছেন, ” Ngugi wa Thiong’o-র প্রয়াণে আমি গভীরভাবে শোকাহত। তিনি ছিলেন একজন কিংবদন্তি সাহিত্যিক, পণ্ডিত, এবং দেশের গর্ব।”

আফ্রিকার এই খ্যাতিমান লেখকের প্রয়াণ বিশ্ব সাহিত্য ও সংস্কৃতির জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর কাজগুলি উত্তর-ঔপনিবেশিক সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *