পৃথিবীর বৃহত্তম মঙ্গল পাথরের ৫ মিলিয়ন ডলারের নিলাম, তদন্তে নাইজার!

শিরোনাম: ৫ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হওয়া মঙ্গলের পাথর, নাইজারের তদন্তে আন্তর্জাতিক চোরাচালানের সন্দেহ

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারের সাহারা মরুভূমিতে পাওয়া গিয়েছিল পৃথিবীর বুকে পাওয়া সবচেয়ে বড় আকারের একটি মঙ্গলগ্রহের পাথর। বিশাল আকারের ২৫ কিলোগ্রামের এই পাথরের টুকরাটি গত মাসে নিউইয়র্কের একটি নিলামে ৫ মিলিয়নেরও বেশি ডলারে (প্রায় ৫৬ কোটি টাকার বেশি) বিক্রি হয়েছে।

এই ঘটনার পরেই নাইজারের সরকার এর ওপর তদন্ত শুরু করেছে। তাদের সন্দেহ, মূল্যবান এই পাথরটি সম্ভবত দেশ থেকে অবৈধভাবে পাচার করা হয়েছে।

পাথরটি কীভাবে পাওয়া গিয়েছিল? জানা যায়, ‘NWA 16788’ নামে পরিচিত এই পাথরটি বিশাল এক উল্কাপাতের ফলে মঙ্গল গ্রহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আসে এবং প্রায় ২২৫ মিলিয়ন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পৃথিবীতে এসে পরে।

নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নাইজারের উত্তর-পশ্চিম সাহারা মরুভূমিতে একজন সংগ্রাহকের (meteorite hunter) নজরে আসে এটি। নিলামকারী সংস্থা সোথেবি’স জানিয়েছে, এরপর পাথরটি আন্তর্জাতিক একজন ব্যবসায়ীর কাছে যায় এবং পরে ইতালির একটি ব্যক্তিগত গ্যালারিতে রাখা হয়।

সেখানকার বিজ্ঞানীরা এর গঠন এবং উৎস সম্পর্কে জানতে গবেষণা করেন। এরপরই এটি নিলামের জন্য নিউইয়র্কে আনা হয়েছিল।

নাইজার সরকার কেন তদন্ত শুরু করেছে? নিলামের পরে, নাইজারের কর্তৃপক্ষ এই পাথরটির নিলাম নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তাদের বক্তব্য, পাথরটি উদ্ধারের প্রক্রিয়া এবং বিক্রির বিষয়টি “আন্তর্জাতিক চোরাচালানের” শামিল হতে পারে।

দেশটির প্রেসিডেন্ট আবদুরাহমানে তিয়ানি এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন এবং মূল্যবান পাথর ও উল্কাপিন্ডের রপ্তানি স্থগিত করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এখন থেকে এসব পাথরের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য রাখা হবে।

তবে, নিলামকারী সংস্থা সোথেবি’স এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, পাথরটি নাইজার থেকে আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনেই আনা হয়েছে। তাদের দাবি, পাথরটির প্রতিটি পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সব ধরনের কাগজপত্র ছিল এবং সংশ্লিষ্ট সব দেশের নিয়মকানুনও তারা মেনেছে।

আন্তর্জাতিক আইন কী বলে? সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিষয়ক আইনজীবী এবং অবৈধ বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ প্যাটি গারস্টেনব্লিখের মতে, জাতিসংঘের সাংস্কৃতিক সম্পত্তি বিষয়ক কনভেনশন অনুযায়ী, বিরল খনিজ পদার্থ, যেমন উল্কাপিন্ড, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

তবে, নাইজারকে প্রমাণ করতে হবে যে, পাথরটির মালিকানা তাদের ছিল এবং সেটি চুরি করা হয়েছে।

অন্যদিকে, জীবাশ্মবিদ পল সেরেনো, যিনি নাইজারের সাহারাতে দীর্ঘদিন ধরে ডাইনোসরের জীবাশ্ম আবিষ্কারের কাজ করছেন, তিনি উল্কাপিন্ডসহ দেশটির প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন।

তাঁর মতে, “যখন স্পষ্ট আইন রয়েছে যে, উল্কাপিন্ডের মতো বিরল খনিজ পদার্থ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, তখন কোনো দেশ থেকে এত মূল্যবান কিছু এভাবে নেওয়া যায় না।” মরক্কোর মতো কিছু দেশে, যেখানে প্রচুর উল্কাপিন্ড পাওয়া যায়, তাদের ভূখণ্ডে পাওয়া গেলে সেগুলোর পুনরুদ্ধার করার নিয়ম রয়েছে।

তবে বিশাল মরুভূমি অঞ্চল এবং অবৈধ ব্যবসার কারণে এই নিয়ম কার্যকর করা কঠিন।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *