নাইজেরিয়ার একটি শহর, মাইদুগুরি, ভয়াবহ বন্যার স্মৃতিকে পেছনে ফেলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সেখানকার মানুষের দৃঢ়তা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এটি সম্ভব হয়েছে।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নাইজেরিয়ার এই শহরটিতে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। এতে সেখানকার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল।
শহরের রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান—সবকিছুই পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। বন্যাকবলিত হয়ে বহু মানুষ তাদের বাসস্থান হারিয়েছিল এবং অনেকের ব্যবসা সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল।
বন্যার ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে মাছ ব্যবসায়ী এলিজাবেথ ফেলিক্স বলেন, “আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময় ছিল সেটি। আমার দোকান পানিতে ডুবে গিয়েছিল এবং প্রায় ২০ লাখ নাইরার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকার সমান) মালামাল নষ্ট হয়ে যায়।
আমি সবকিছু হারিয়েছিলাম।”
বন্যার কারণে শহরের অনেক এলাকার অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া, সেখানকার একটি চিড়িয়াখানার ৮০ শতাংশ প্রাণী মারা যায়।
শহরের প্রধান বাজারও পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল।
তবে, প্রতিকূলতা সত্ত্বেও শহরটি দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সাতটিরও বেশি রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে।
এছাড়া, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং অন্যান্য সহযোগী সংগঠনও ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তা করেছে।
বন্যাকবলিত এক লাখেরও বেশি পরিবারের মধ্যে প্রায় ১৮ বিলিয়ন নাইরা (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৪৭ কোটি টাকার বেশি) বিতরণ করা হয়েছে।
বন্যার পরপরই স্থানীয় তরুণ-তরুণীরা এগিয়ে আসে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যে। নিজেদের উদ্যোগে তারা ত্রাণ সংগ্রহ করে এবং আশ্রয়হীনদের পাশে দাঁড়ায়।
স্থানীয় বাসিন্দা ইজাসিনি ইজানি বলেন, “আমরা বন্ধু-বান্ধব মিলে কাপড় ও রান্নার সামগ্রী সংগ্রহ করে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করি।
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী লাওন মাইগানা দ্রুত একটি স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য খাদ্য সরবরাহ করেন।
বন্যাকবলিত এলাকার বাসিন্দাদের জন্য সেনাবাহিনীর সরবরাহ করা নৌকার মাধ্যমে খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরাও ধীরে ধীরে তাদের ব্যবসা পুনরায় শুরু করেছেন।
এলিজাবেথ ফেলিক্স বলেন, “আমার ব্যবসা আবার চালু হয়েছে, এবং আগের চেয়ে ভালো চলছে।
দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় ধরে চলা অস্থিরতা এবং সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মধ্যেও এখানকার মানুষের মধ্যে একটা শক্তিশালীCommunity spirit বা সম্প্রদায়ের বন্ধন তৈরি হয়েছে।
ইজাসিনি ইজানি বলেন, “দুর্যোগের মধ্যেও মানুষ একে অপরের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সবাই একসঙ্গে চেষ্টা চালিয়ে গেছে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার জন্য।
শুধু বাজার বা রাস্তাঘাট সংস্কারই নয়, শহরের Sanda Kyarimi চিড়িয়াখানাও আবার আগের রূপে ফিরে এসেছে।
চিড়িয়াখানার ব্যবস্থাপক আলী আবাচা ডন বেস্ট জানান, “বন্যার কারণে অনেক প্রাণী মারা গিয়েছিল এবং কিছু পালিয়ে গিয়েছিল।
তবে আমরা সবকিছু পুনর্গঠন করতে সক্ষম হয়েছি।”
দীর্ঘমেয়াদী পুনরুদ্ধার প্রকল্পের অংশ হিসেবে, ভেঙে যাওয়া বাঁধটি পুনরায় নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
এই প্রকল্পটি দুটি পর্যায়ে ২৪ মাসের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে, যার আনুমানিক খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৮০ বিলিয়ন নাইরা (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬ হাজার ৫৮০ কোটি টাকার বেশি)।
২০২৭ সালে বাঁধের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে এটি কৃষি ও জল সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতিতে সহায়তা করবে।
দেশটির জলসম্পদ মন্ত্রী জোসেফ উটসেভ জানান, মার্চ থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে জরুরি সংস্কারের মাধ্যমে ভবিষ্যতে বন্যা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এলিজাবেথ ফেলিক্স বলেন, “আমরা বোকো হারামের সময় পার করেছি, বন্যারও মোকাবেলা করেছি।
সৃষ্টিকর্তার দয়ায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।”
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস