আতঙ্কের রাত: টর্নেডোর গ্রাসে বাড়ছে মৃত্যু, কারণ জানেন?

রাতের বেলা টর্নেডোর বিভীষিকা: বাড়ছে মৃত্যুর হার, বাড়ছে উদ্বেগে।

যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়ার ইতিহাসে টর্নেডো একটি পরিচিত দুর্যোগ। দিনের আলোয় দেখা এই ঘূর্ণিঝড়ের চেয়ে রাতের বেলা আঘাত হানা টর্নেডোগুলো অনেক বেশি ভয়ঙ্কর।

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাতের টর্নেডোগুলো দিনের বেলার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বেশি মানুষের জীবন কেড়ে নেয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই ধরনের টর্নেডোর সংখ্যা বাড়ছে, যা উদ্বেগের কারণ।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে টর্নেডোর প্রবণতা বাড়ছে, বিশেষ করে মধ্য-পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে এর প্রকোপ বেশি। আবহাওয়াবিদদের মতে, এই অঞ্চলের ভৌগোলিক অবস্থান এবং জলবায়ুর পরিবর্তন রাতের টর্নেডোর সংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে।

উদাহরণস্বরূপ, ওকলাহোমা, মিসৌরি, মিসিসিপি এবং আলাবামার মতো রাজ্যগুলোতে ১৯৫০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে সংঘটিত টর্নেডোগুলোর ৩৫ শতাংশের বেশি রাতের বেলা আঘাত হেনেছিল।

টেনেসিতে এই হার ছিল আরও বেশি – প্রায় ৪৬ শতাংশ।

রাতের বেলা টর্নেডোর বিপদ বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো দৃশ্যমানতার অভাব। রাতের অন্ধকারে ঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, ফলে মানুষজন দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারে না।

এছাড়াও, অনেক সময় মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছানোর আগেই টর্নেডো আঘাত হানে। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অঞ্চলে, বিশেষ করে যেখানে হালকা কাঠামো ও প্রি-ফেব্রিকেটেড ঘর বেশি, সেখানে আশ্রয় নেওয়ার মতো উপযুক্ত স্থানও কম থাকে, যা রাতের টর্নেডোর সময় জীবনহানির ঝুঁকি বাড়ায়।

আবহাওয়াবিজ্ঞানীরা এখন এই সমস্যার সমাধানে কাজ করছেন। উন্নত পূর্বাভাস ব্যবস্থা এবং সতর্কবার্তা প্রদানের জন্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) ব্যবহার করা হচ্ছে।

এর ফলে ঝড়ের পূর্বাভাস সময় আরও বাড়ানো সম্ভব হবে, যা মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে সাহায্য করবে। উদাহরণস্বরূপ, ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস (National Weather Service)-এর ‘ওয়ার্ন-অন-ফোরকাস্ট’ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মিসৌরির কার্টার কাউন্টিতে একটি টর্নেডো আঘাত হানার ২ ঘণ্টা আগেই সতর্কবার্তা দেওয়া সম্ভব হয়েছিল।

তবে, টর্নেডো মোকাবিলায় শুধু পূর্বাভাসই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন সচেতনতা এবং প্রস্তুতি। দুর্যোগের সময় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য জনগণকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

স্থানীয় প্রশাসন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের উচিত, আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা এবং জরুরি অবস্থার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। একইসাথে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোও জরুরি, কারণ এটি টর্নেডোর মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধরন এবং তীব্রতাকে প্রভাবিত করে।

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত এই তথ্য আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের দেশেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি রয়েছে। তাই, টর্নেডোর মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি, পূর্বাভাস ব্যবস্থা উন্নত করা এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *