মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিজ্ঞান গবেষণায় অর্থায়ন হ্রাস, উদ্বেগে গবেষক মহল।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ (এনআইএইচ)-এর গবেষণা খাতে বরাদ্দ কমানোর সিদ্ধান্তের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দেশটির বিজ্ঞানীরা। এই অর্থ কমানোর ফলে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে, এমনকি যারা পূর্বে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন জুগিয়েছিল, সেখানকার গবেষণাতেও খারাপ প্রভাব পড়েছে।
চিকিৎসা বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণা, বিশেষ করে এইচআইভি/এইডস, টিকাদান, এবং গ্রামীণ স্বাস্থ্য বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ অনেক গবেষণাই এখন হুমকির মুখে।
ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে এনআইএইচ এই বরাদ্দ কমানো শুরু করে। এর ফলে ইতিমধ্যেই প্রায় আটশ গবেষণা প্রকল্প বা তার অংশবিশেষ বাতিল করা হয়েছে। বাতিল হওয়া প্রকল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছিল এমন সব রাজ্যের যেখানে রিপাবলিকান পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রেখেছে অথবা ট্রাম্পের সমর্থক বেশি।
উদাহরণস্বরূপ, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, ওহাইও, টেক্সাস এবং নেব্রাস্কার মত রাজ্যগুলোতে এর প্রভাব পড়েছে।
এই সিদ্ধান্তের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছেন এইচআইভি/এইডস এবং টিকাদান বিষয়ক গবেষকরা। সম্প্রতি বাতিল হওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে ছিল তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধের লক্ষ্যে পরিচালিত একটি গবেষণা।
এই গবেষণাটির জন্য ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটিকে ৭ কোটি ৩০ লক্ষ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭৯৭ কোটি টাকা) বরাদ্দ করা হয়েছিল। এছাড়াও, এইডস বিষয়ক একটি নেটওয়ার্ক তৈরির পরিকল্পনাও বাতিল করা হয়েছে, যা তরুণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
গবেষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করবে। গবেষণার অভাবে স্বাস্থ্যখাতে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান আরও খারাপ হতে পারে।
ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের কর্মীরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন তাঁদের কাছে এমন অনেক তালিকা আসছে যেখানে গবেষণা প্রকল্প বাতিল করার কথা উল্লেখ করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগের মুখপাত্র জানিয়েছেন, এনআইএইচ তাদের অগ্রাধিকারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমন গবেষণাগুলোর অর্থায়ন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে, এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে, বিজ্ঞানীরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, গবেষণা খাতে অর্থ হ্রাস হলে রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বড় ধরনের ক্ষতি হবে। এই পরিস্থিতিতে, স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন সংগঠন এবং গবেষকরা ইতিমধ্যেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন, যাতে এই তহবিল বাতিল প্রক্রিয়া বন্ধ করা যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এনআইএইচ-এর গবেষণা তহবিল মার্কিন স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। একটি প্রকল্পের অর্থ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, কমিউনিটি নন-প্রফিট সংস্থা এবং সরকারি সংস্থার মধ্যে ভাগ করা হয়।
এই ধরনের পদক্ষেপের কারণে, শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রমই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, বরং এর প্রভাব অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হতে পারে। কারণ, উন্নত দেশগুলোতে বিজ্ঞান গবেষণায় অর্থায়ন কমানো হলে, এর প্রভাব বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যখাতে পড়তে বাধ্য।
বিশেষ করে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নতুন রোগ প্রতিরোধের গবেষণা এবং স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি ব্যাহত হতে পারে। এই ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে টিকাদান কর্মসূচি, এইডস নিয়ন্ত্রণ, এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়।
তথ্যসূত্র: সিএনএন