মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি নতুন ধারণা: নিজেকে ‘পুনরায় অভিভাবকত্ব’ দেওয়া।
ছোটবেলার কিছু কষ্ট, যা হয়তো আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন? বাবা-মায়ের শাসন, বঞ্চনা অথবা ভালোবাসার অভাব—এগুলো কি আজও আপনাকে প্রভাবিত করে? মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘পুনরায় অভিভাবকত্ব’ নামক একটি পদ্ধতির মাধ্যমে অতীতের সেই ক্ষত সারানো সম্ভব।
এই পদ্ধতিতে, একজন ব্যক্তি নিজের ভেতরের ‘ছোট্ট আমি’-কে ভালোবাসতে ও সেই অনুযায়ী আচরণ করতে শেখেন, যা সুস্থ জীবনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
ধরুন, আপনার বাবা ছিলেন খুবই কঠোর প্রকৃতির। ছোটবেলায় সামান্য ভুল করলে তিনি হয়তো রেগে যেতেন, অথবা আপনার কোনো ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিতেন না। এমন পরিবেশে বেড়ে ওঠা একজন মানুষ পরিণত বয়সেও অন্যদের মন জয় করতে চাইতে পারেন, সবসময় সমালোচিত হওয়ার ভয়ে ভীত থাকতে পারেন।
মনোবিজ্ঞানী ও পরামর্শদাতা নিকোল জনসন এই ধরনের পরিস্থিতিকে ‘পুনরায় অভিভাবকত্ব’-এর উপযুক্ত সময় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের অনেকের মধ্যেই শৈশবের কিছু না-দেখা ক্ষত থাকে, যা আমাদের সম্পর্ক, সিদ্ধান্ত এবং জীবনকে প্রভাবিত করে। এই বিষয়গুলো আমরা হয়তো অনেক সময় খেয়ালই করি না।”
তাহলে, ‘পুনরায় অভিভাবকত্ব’ আসলে কী? এটি কোনো বায়না পূরণ বা নিজেকে অতিরিক্ত প্রশ্রয় দেওয়া নয়। বরং, এটি একটি থেরাপিউটিক প্রক্রিয়া, যা আপনাকে নিজের ভেতরের শিশুকে ভালোবাসতে শেখায়।
এর মাধ্যমে আপনি নিজের প্রতি সেই যত্ন নিতে পারেন, যা হয়তো ছোটবেলায় পাননি। এর মূল ধারণা হলো, আপনি নিজের আবেগ এবং অনুভূতির প্রতি সেইভাবে সাড়া দেবেন, যেভাবে একজন ভালো অভিভাবক তাঁর সন্তানের প্রতি দেন। অর্থাৎ, নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং সুস্থ মানসিকতার চর্চা করা।
নিকোল জনসন তাঁর আসন্ন বই ‘রিপ্যারেন্টিং ইয়োর ইনার চাইল্ড: হিলিং আনরেজোল্ভড চাইলহুড ট্রমা অ্যান্ড রিক্লেইমিং হোলনেস থ্রু সেলফ-কম্প্যাশন’-এ এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তাঁর মতে, “আমরা অনেকেই অতীতের কষ্টগুলো থেকে মুক্তি পেতে চাই এবং আমাদের সন্তানদের সেই কষ্ট থেকে দূরে রাখতে চাই। ‘পুনরায় অভিভাবকত্ব’ সেই প্রশ্নের উত্তর দেয়।”
‘পুনরায় অভিভাবকত্ব’-এর মূল বিষয় হলো, নিজের ভেতরের শিশুকে ভালোবাসা ও তার প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া। মনোবিজ্ঞানী ড. অ্যাভিগাইল লেভ মনে করেন, “আমরা আমাদের ভেতরের অভিজ্ঞতাগুলোকে মূল্যায়ন করি। এর অর্থ এই নয় যে, খারাপ আচরণ করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।”
এই প্রক্রিয়া শুরু করার কিছু লক্ষণ রয়েছে। যেমন, নিজের অধিকারের কথা বলতে বা কোনো বিষয়ে ‘না’ বলতে অস্বস্তি বোধ করা, নিজেকে যথেষ্ট যোগ্য না ভাবা, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে ভয় পাওয়া, অথবা ভালোবাসার সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে সমস্যা হওয়া।
এছাড়াও, ছোটবেলার কোনো আঘাত বা মানসিক কষ্টের কারণেও এই পদ্ধতির প্রয়োজন হতে পারে।
তাহলে, কীভাবে শুরু করবেন? জনসনের মতে, এর দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে—নিজের অতীতের আঘাতগুলো চিহ্নিত করা এবং সেগুলো সারানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া। “যদি আপনি আজ নিজের প্রতি একটু বেশি দয়া দেখান, অথবা কোনো বিষয় সম্পর্কে নতুন ধারণা পান, তাহলে সেটিও ‘পুনরায় অভিভাবকত্ব’-এর অংশ,” তিনি বলেন।
যদি আপনি ছোটবেলায় কোনো কষ্টের শিকার হয়ে থাকেন, তাহলে সেই সময়ের কথা মনে করে নিজেকে শান্ত করুন। নিজেকে বোঝান যে, আপনি ভালোবাসার যোগ্য এবং আপনি একা নন। প্রয়োজনে, একজন থেরাপিস্টের সাহায্য নিন।
তিনি আপনাকে আপনার অতীতের আঘাতগুলো বুঝতে এবং সেগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করতে পারেন।
মনে রাখবেন, নিজের প্রতি সহানুভূতি দেখালে, আপনি অন্যদের প্রতিও সহানুভূতিশীল হতে পারবেন। এটি আত্ম-উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়, যা আপনাকে আরও সুখী এবং পরিপূর্ণ জীবন দিতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন