৭০ বছর বয়সের পরেও নতুন দিগন্ত: ৬৩ বছর বয়সে প্রথম পুল-আপ, এরপর ‘নিনজা ওয়ারিয়র’-এর পথে
জীবনে বয়স কেবল একটি সংখ্যা—কথাটি আবারও প্রমাণ করেছেন ৭৩ বছর বয়সী মার্কিন নারী, গিন্নি ম্যাককল। যিনি প্রমাণ করেছেন ইচ্ছাশক্তি থাকলে বার্ধক্যেও শরীরকে নতুন চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত করা সম্ভব।
৬৩ বছর বয়সে যখন তাঁর মেয়ে, পেশায় স্টান্ট ওম্যান জেসি গ্রাফ, তাঁকে পুল-আপ করার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন, তখন হয়তো অনেকেই হেসেছিলেন। কিন্তু গিন্নি হাল ছাড়েননি।
টানা ৯ মাস কঠোর অনুশীলনের পর তিনি সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেন। বর্তমানে তিনি একটানা ১৭টি পুল-আপ করতে পারেন!
গিন্নি ম্যাককল শুধু একজন সাধারণ বৃদ্ধা নন। তিনি এখন ‘আমেরিকান নিনজা ওয়ারিয়র’ নামের জনপ্রিয় টেলিভিশন শো-এর প্রতিযোগী।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অনুযায়ী, তিনিই এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া সবচেয়ে বয়স্ক নারী। তাঁর এই অবিশ্বাস্য যাত্রার পেছনে রয়েছে এক অসাধারণ অনুপ্রেরণা।
ছোটবেলায় গিন্নি ছিলেন কিছুটা লাজুক প্রকৃতির। বাবা-মায়ের উৎসাহে নাচের প্রতি আকৃষ্ট হন তিনি।
নাচের প্রতি ভালোবাসাই তাঁকে টেনে নিয়ে যায় নিউ ইয়র্কে, যেখানে তিনি ব্রডওয়ের মতো বিখ্যাত মঞ্চে কাজ করার সুযোগ পান। সত্তরের দশকে তিনি টিভি কমার্শিয়ালেও কাজ করেছেন।
সংসারের পাশাপাশি তিনি তাঁর অভিনয় জীবনটাও বেশ উপভোগ করেছেন।
কিন্তু জীবন সবসময় একরকম থাকে না। বিবাহবিচ্ছেদের পর সন্তানদের নিয়ে তিনি নতুন করে জীবন শুরু করেন।
এরপর তিনি স্থানীয় একটি রেডিও স্টেশনে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ শুরু করেন। ৬০ বছর বয়সে তিনি রেডিওর চাকরি থেকে অবসর নেন।
এরপর তিনি খেলাধুলা এবং শরীরচর্চার দিকে মনোযোগ দেন।
গিন্নি ম্যাককলের শরীরচর্চা শুরু করার পেছনে তাঁর মেয়ের অবদান অনস্বীকার্য।
মেয়ে জেসিকে ‘আমেরিকান নিনজা ওয়ারিয়র’-এ অংশ নিতে দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হন এবং নিজেকে আরও শক্তিশালী করে তোলার সিদ্ধান্ত নেন।
তাঁর কথায়, “আমার মেয়ে কতটা শক্তি ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে, তা দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। আমি বুঝতে পারলাম, বয়স বাড়লেও শরীরকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।”
শারীরিক সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি গিন্নি তাঁর মানসিকতার পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। তাঁর মতে, ব্যর্থতাকে মেনে না নিয়ে বরং তা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।
তিনি মনে করেন, “দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনই জীবনকে পরিবর্তন করে দেয়।”
বর্তমানে, গিন্নি ম্যাককল নিয়মিত শরীরচর্চা করেন এবং বিভিন্ন চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন।
তাঁর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ১৩০,০০০-এর বেশি ফলোয়ার রয়েছে, যেখানে তিনি তাঁর ফিটনেস এবং জীবন সংগ্রামের নানা দিক তুলে ধরেন।
গিন্নির এই গল্প আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণা। বয়স যে কেবল একটি সংখ্যা, তা তিনি প্রমাণ করেছেন।
প্রমাণ করেছেন, ইচ্ছাশক্তি থাকলে যেকোনো বয়সে নতুন কিছু করা সম্ভব।
শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও বয়স্ক মানুষেরা স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করতে পারেন এবং শারীরিক কার্যকলাপের মাধ্যমে সুস্থ থাকতে পারেন।
তথ্য সূত্র: The Guardian