মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (NOAA) নামক সংস্থা তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যভাণ্ডার বন্ধ করে দিচ্ছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগগুলির আর্থিক ক্ষতির হিসাব রাখত।
১৯৮০ সাল থেকে শুরু করে, এই ডেটাবেস “বিলিয়ন-ডলার ওয়েদার অ্যান্ড ক্লাইমেট ডিজাস্টারস” নামে পরিচিত ছিল এবং এতে ঘূর্ণিঝড়, শিলাবৃষ্টি ও দাবানলের মতো চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলোর কারণে হওয়া ক্ষতির পরিমাণ নথিভুক্ত করা হতো। ২০২৪ সালের পর থেকে এই ডেটাবেসটি আর হালনাগাদ করা হবে না।
এই সিদ্ধান্তের ফলে জনসাধারণের পক্ষে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হওয়া দুর্যোগগুলোর আর্থিক প্রভাব সম্পর্কে অবগত হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
NOAA-এর কর্মী সংখ্যা কমানো এবং বাজেট হ্রাস করার কারণে এই কর্মসূচিটি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
এটি জলবায়ু বিষয়ক বিভিন্ন প্রকল্পের উপর কর্তৃপক্ষের নজরদারিরই একটি অংশ।
এই ডেটাবেসে ১৯৮০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে হওয়া আবহাওয়া ও জলবায়ু সম্পর্কিত মোট ৪০৩টি দুর্যোগের হিসাব ছিল, যার সম্মিলিত আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ২.৯৪৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।
যদি বাংলাদেশি মুদ্রায় হিসাব করা হয়, তবে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩১০ লক্ষ কোটি টাকার বেশি।
তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ে প্রতি বছর গড়ে ৯টি বড় ধরনের দুর্যোগ হয়েছে।
তবে, গত পাঁচ বছরে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে বছরে প্রায় ২৪টিতে।
শুধু ২০২৩ সালেই ২৮টি এমন দুর্যোগের ঘটনা ঘটেছিল।
যদিও এই ডেটাবেস তৈরির মূল ক্ষেত্রটি ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তবে এর গুরুত্ব বিশ্বব্যাপী।
কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারা বিশ্বেই চরম আবহাওয়ার ঘটনা বাড়ছে, যা বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।
এখানকার মানুষ প্রায়ই বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের ডেটাবেস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
কারণ, এই তথ্যভাণ্ডারগুলি দুর্যোগের পূর্বাভাস দেওয়া এবং ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে সাহায্য করে।
এর অভাবে নীতিনির্ধারক এবং গবেষকদের পক্ষে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হবে।
এছাড়া, বিভিন্ন বীমা কোম্পানি এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক সংস্থাগুলিও তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে ক্ষতির হিসাব রাখে, তবে সেই ডেটা সাধারণত সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকে না।
বর্তমানে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগের সংখ্যা এবং তীব্রতা দুটোই বাড়ছে।
তাই, এই ধরনের তথ্যভাণ্ডারের গুরুত্ব আরও বেড়েছে।
সরকারের উচিত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া।
একইসঙ্গে, আন্তর্জাতিক ডেটা এবং গবেষণার উপর নির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব সক্ষমতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন, যাতে দেশের মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন