নবারু মাতসুহিসার সাফল্যের গল্প: কীভাবে একজন তরুণ স্বপ্ন জয় করলেন?

নবু মাতসুহিসা: এক স্বপ্নের কারিগর

ছোটবেলায় বাবাকে হারানো নবু মাতসুহিসা, যিনি আজ বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত একজন সুস্বাদু খাদ্য প্রস্তুতকারক এবং রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী। তাঁর জীবন একটি অনুপ্রেরণামূলক গল্প, যা কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং সাফল্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

টোকিওতে সুশি পরিবেশনকারী হিসেবে প্রশিক্ষণ নেওয়ার কঠিন দিনগুলো থেকে শুরু করে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন—নবু-র এই পথচলার প্রতিটি ধাপেই রয়েছে নতুন কিছু শেখার অভিজ্ঞতা।

নবু-র বাবা ছিলেন একজন স্থপতি। বাবার অনুপ্রেরণা থেকেই তিনি একদিন বিশ্ব ভ্রমণে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। কিশোর বয়সে, দাদা-ভাইদের সঙ্গে সুশি রেস্তোরাঁতে যাওয়াটা ছিল তাঁর কাছে দারুণ আকর্ষণীয় একটা অভিজ্ঞতা।

জাপানি সংস্কৃতির এই বিশেষ খাদ্য পরিবেশন শৈলী তাঁকে এতটাই মুগ্ধ করেছিল যে, তিনি এই পেশায় আসার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর ভাষায়, সুশির প্রতি ভালোবাসা থেকেই তিনি এই পেশা বেছে নিয়েছিলেন।

জাপানে ১৮ বছর বয়সে, সুশি পরিবেশনকারী হওয়ার প্রশিক্ষণ শুরু করেন নবু। টানা সাত বছর ধরে চলা এই প্রশিক্ষণে, প্রথম তিন বছর পর্যন্ত তাঁকে সুশি বানানোর সুযোগ দেওয়া হয়নি। মাসের মধ্যে মাত্র দু’দিন ছুটি পেতেন তিনি।

এমনকি, রেস্টুরেন্টের মেঝেতেই তাঁর ঘুমোতে হতো। তবে কাজের প্রতি ভালোবাসাই ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় শক্তি। ভোরবেলা মাছের বাজারে যাওয়া থেকে শুরু করে, মেনু তৈরি এবং গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলা—সবকিছুতেই তিনি আনন্দ খুঁজে পেতেন।

প্রশিক্ষণ শেষে পেরুর এক বন্ধুর সঙ্গে লিমাতে রেস্তোরাঁ খোলার সুযোগ পান নবু। সেখানে তিন বছর কাজ করার পর, তিনি পাড়ি জমান আর্জেন্টিনার উদ্দেশ্যে। এরপর আবার ফিরে আসেন টোকিওতে।

আলাস্কার অ্যাঙ্করেজে একটি রেস্তোরাঁ খোলেন তিনি, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সেটি আগুনে পুড়ে যায়। স্বপ্নভঙ্গ হওয়ার সেই মুহূর্তে তিনি প্রায় হতাশ হয়ে আত্মহত্যার কথা ভেবেছিলেন, কিন্তু পরিবারের কথা ভেবে তিনি আবার নতুন করে পথচলার সিদ্ধান্ত নেন।

এরপর তিনি লস অ্যাঞ্জেলেসে একটি ছোট রেস্তোরাঁতে কাজ শুরু করেন। অবশেষে, ১৯৮৭ সালে, বেভারলি হিলসে নিজের প্রথম রেস্তোরাঁ “মাতসুহিসা” খোলেন নবু। তাঁর স্বপ্ন সত্যি হতে শুরু করে।

এই সময়ে, ব্রিটিশ পরিচালক রবার্ট ডি নিরোর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। ডি নিরো প্রায়ই “মাতসুহিসা”-তে আসতেন এবং খাবারের প্রশংসা করতেন। একদিন তিনি নবুকে নিউ ইয়র্কে একটি রেস্তোরাঁ খোলার প্রস্তাব দেন।

প্রথমে রাজি না হলেও, পরে তিনি ডি নিরোর ওপর আস্থা রেখে সেই প্রস্তাবে রাজি হন। ১৯৯৪ সালে নিউ ইয়র্কে প্রথম “নবু” রেস্তোরাঁ খোলা হয়।

আজ নবু-র বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫৫টি রেস্তোরাঁ এবং ১৮টি হোটেল রয়েছে। খাবারের গুণগত মান বজায় রাখতে এবং গ্রাহকদের ভালোবাসার প্রতিদান দিতে তিনি সবসময় সচেষ্ট থাকেন।

তাঁর মতে, কঠিন পথ বেছে নেওয়াই ভালো, কারণ এর মাধ্যমেই সেরাটা দেওয়া সম্ভব হয়। তাঁর এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম, একাগ্রতা এবং নতুন কিছু করার অফুরন্ত সাহস।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *