নদী কি জীবিত? পশ্চিমা বিশ্বের এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে সেখানকার নদীগুলোর অধিকার নিয়ে ওঠা বিভিন্ন আলোচনার কথা তুলে ধরেছেন রবার্ট ম্যাকফারলেন। পরিবেশ বিষয়ক এই অনুসন্ধানী লেখার মূল বিষয় হলো, নদীকে কেবল একটি সম্পদ হিসেবে না দেখে, তাকে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়োজনীয়তা।
আমাদের বাংলাদেশেও নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। নদীমাতৃক এই দেশের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে নদীর সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। যুগ যুগ ধরে এ দেশের সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং মানুষের জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে নদীগুলো বিদ্যমান।
কিন্তু বর্তমানে, জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ এবং নির্বিচারে সম্পদ আহরণের ফলে নদীগুলো মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। অনেক ক্ষেত্রে, নদ-নদীগুলো তাদের স্বাভাবিক জীবন হারিয়ে ফেলছে, যা পরিবেশের জন্য এক গভীর উদ্বেগের কারণ।
পশ্চিমা বিশ্বে, নদীকে রক্ষার এই লড়াইয়ে নতুন ধারণা জন্ম নিয়েছে। নদীকে ‘জীবিত সত্তা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি এখন গুরুত্ব পাচ্ছে। এর মানে হলো, নদীরও কিছু অধিকার আছে, যা রক্ষার দায়িত্ব মানুষের।
ইকুয়েডরের লস সেড্রোস নদীর ক্ষেত্রে সেখানকার আদালত সেখানকার বন ও নদীর জীবন ধারণের অধিকারের পক্ষে রায় দিয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের ওহানুয়ুই নদীর ক্ষেত্রেও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সেখানকার আইন অনুযায়ী, নদীকে ‘আইনি সত্তা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যা নদীর পক্ষে আদালতে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে।
নদীর অধিকারের ধারণাটি শুধু আইন বা নীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি মানুষের ভাবনাতেও পরিবর্তন আনতে শুরু করেছে। অনেক শহরে, নদীর পুনরুদ্ধার বা ‘ডে-লাইটিং’-এর কাজ চলছে, যেখানে কংক্রিটের নিচে বন্দী নদীগুলোকে আবার দৃশ্যমান করা হচ্ছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে চেওংগেচুন ঝর্ণা পুনরুদ্ধার করার ফলে সেখানকার পরিবেশের উন্নতি হয়েছে, যা স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
তবে, নদীর জীবন রক্ষার এই লড়াই সহজ নয়। একদিকে যেমন মুনাফাখোরি মানসিকতা, তেমনই অন্যদিকে দূষণ এবং বাঁধ নির্মাণের মতো চ্যালেঞ্জগুলো বিদ্যমান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নদী রক্ষার জন্য আন্দোলনকারীরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন।
তাদের প্রধান লক্ষ্য হলো, নদীর প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা এবং তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
বাংলাদেশেও নদী রক্ষার গুরুত্ব অনেক। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, মেঘনা, যমুনা—এসব নদ-নদী আমাদের জীবনের অংশ। এদের বাঁচাতে না পারলে, আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ পরিবেশ রেখে যেতে পারব না।
তাই, পশ্চিমা বিশ্বের মতো, আমাদেরও নদীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে এবং তাদের অধিকার রক্ষার জন্য সচেষ্ট হতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায়, আমরা আমাদের নদীগুলোকে বাঁচাতে পারি, যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সবুজ ও সুন্দর বাংলাদেশ নিশ্চিত করবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান