চন্দ্রপৃষ্ঠে ফোর-জি নেটওয়ার্ক: নোকিয়া ও নাসার যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
চাঁদে বসে টেক্সট করা? মঙ্গল গ্রহে সরাসরি ভিডিও স্ট্রিমিং? এখন হয়তো বিষয়টি তেমন দূরে নেই। নাসা (NASA) এবং নোকিয়ার যৌথ উদ্যোগে চাঁদে স্থাপন করা হচ্ছে একটি সেলুলার নেটওয়ার্ক। এর মূল লক্ষ্য হলো, চাঁদে মানুষের দীর্ঘমেয়াদী বসবাসের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা এবং ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযানের পথ সুগম করা।
জানা গেছে, চলতি বছর একটি স্পেসএক্স (SpaceX) রকেটের মাধ্যমে এই ফোর-জি নেটওয়ার্কটি চাঁদে পাঠানো হবে। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে এই নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হবে এবং এটি পৃথিবী থেকে নিয়ন্ত্রিত হবে। নাসা’র প্রোগ্রাম বিভাগের ডেপুটি অ্যাসোসিয়েট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ওয়াল্ট এঙ্গেলান্ড (Walt Engelund) সিএনএনকে জানান, “একটি নেটওয়ার্ক তৈরি এবং পরিচালনা করার প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো, এমন একটি মহাকাশ-যোগ্য সেলুলার সরঞ্জাম তৈরি করা, যা উপযুক্ত আকার, ওজন এবং শক্তির প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারে। সেই সঙ্গে কোনো কারিগর ছাড়াই এটি স্থাপন করা সম্ভব হবে।
নোকিয়ার বেল ল্যাবস (Bell Labs) এই ফোর-জি নেটওয়ার্কটি তৈরি করছে, যেখানে বাণিজ্যিক উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি তৈরি করতে নাসা ১৪.১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান দিয়েছে। এই নেটওয়ার্কটি স্থাপন করার পর ল্যান্ডার রেডিও সরঞ্জামের মাধ্যমে দুটি রোভারের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবে, যাদের প্রধান কাজ হবে বরফ অনুসন্ধান করা। এই অনুসন্ধানের মাধ্যমে চাঁদে জলের সন্ধান করা সম্ভব হবে, যা ভবিষ্যতে অক্সিজেন তৈরি এবং জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাবনা তৈরি করবে।
নাসার আর্টেমিস প্রোগ্রামের জন্য এই সেলুলার সংযোগ অপরিহার্য। এই প্রোগ্রামের লক্ষ্য হলো, এই দশকের মধ্যে নভোচারীদের চাঁদে পুনরায় পাঠানো। বর্তমানে নভোচারীরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য রেডিও ব্যবহার করেন। তবে নাসা চায় এমন একটি ব্যবস্থা, যা উচ্চ-রেজোলিউশনের ভিডিও এবং বৈজ্ঞানিক ডেটা সরবরাহ করতে পারবে। ওয়াল্ট এঙ্গেলান্ড আরও জানান, “চাঁদে যোগাযোগ স্থাপন করা আর্টেমিস মিশনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেমনটা গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ, খাবার জল বা শ্বাস নেওয়ার মতো প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো।
ভবিষ্যতে এই প্রচেষ্টা একটি চন্দ্র যোগাযোগ নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করবে, যা আমাদের অভিযাত্রীদের বৈজ্ঞানিক তথ্য আদান-প্রদান, মিশন কন্ট্রোলের সঙ্গে আলোচনা এবং পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দেবে, অনেকটা যেন তারা তাদের মোবাইল ফোনে কথা বলছে।
এই প্রযুক্তি পৃথিবীর বাইরের জগতে ইন্টারনেটের ভিত্তি স্থাপন করতে পারে। মহাকাশ উপনিবেশ স্থাপনকারীরা তাদের স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারবে এবং পৃথিবীর মতো একই সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করতে পারবে। নাসা তাদের ‘টিপিং পয়েন্ট’ প্রকল্পের অংশ হিসেবে বেল ল্যাবসকে নির্বাচন করেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভবিষ্যতের মিশনের জন্য প্রযুক্তি তৈরি করতে বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারিত্ব করা হচ্ছে।
বেল ল্যাবসের প্রেসিডেন্ট থিয়েরি ক্লেইন (Thierry Klein) সিএনএনকে জানান, “ভবিষ্যতের চন্দ্র অর্থনীতি তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ, তথ্য বিনিময় এবং কার্যক্রম বজায় রাখতে যোগাযোগ প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল হবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “এর মধ্যে চাঁদে আধা-স্থায়ী বা স্থায়ী মানুষের বসবাস, সেইসাথে পরিবহন, সম্পদ আহরণ, খনিজ প্রক্রিয়াকরণ এবং বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহের জন্য স্বয়ংক্রিয় রোবোটিক কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এই প্রযুক্তির বাণিজ্যিক সম্ভাবনাও রয়েছে। যদি একটি নেটওয়ার্ক মহাকাশের প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে পারে, তাহলে এটি পৃথিবীর চরম আবহাওয়ার স্থানগুলোতেও ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন – মেরু অঞ্চলের বরফ, মরুভূমি বা সমুদ্রের প্ল্যাটফর্ম।
তথ্য সূত্র: CNN