মদ-মুক্ত পানীয়: স্বাস্থ্য সচেতনতার নতুন দিগন্ত?
বিশ্বজুড়ে, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোতে, মদ্যপান কমাতে বা একেবারে বন্ধ করতে ইচ্ছুক মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এই পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে নন-অ্যালকোহলিক পানীয়ের চাহিদা বাড়ছে, যা এখন স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কাছে বেশ পরিচিত।
এই পানীয়গুলো একদিকে যেমন মদ্যপান থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে, তেমনি সামাজিক অনুষ্ঠানে অন্যদের সাথে মিশে থাকার সুযোগও তৈরি করে।
নন-অ্যালকোহলিক বিয়ার ও ককটেল এখন বেশ জনপ্রিয়। এইসব পানীয়ের মূল আকর্ষণ হলো, এগুলো দেখতে, গন্ধ এবং স্বাদে অনেকটা অ্যালকোহলের মতোই, যা মদ্যপানের অভ্যাস কমাতে সহায়ক হতে পারে।
কেউ কেউ হয়তো মনে করতে পারেন, যারা অ্যালকোহল পান করা ছেড়ে দিয়েছেন, তাদের জন্য এই ধরনের পানীয় সেবন করা কতটা নিরাপদ!
যুক্তরাষ্ট্রের বাজার গবেষণা সংস্থা, NielsenIQ এর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর নন-অ্যালকোহলিক ওয়াইন, বিয়ার ও স্পিরিট-এর বিক্রি ৮২ কোটি ৩০ লক্ষ ডলারে পৌঁছেছে।
বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি! এই পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায়, এই ধরনের পানীয়ের চাহিদা কতটা বাড়ছে।
যারা নিয়মিত অ্যালকোহল পান করেন, তাদের অনেকেই এখন একটি অ্যালকোহলিক পানীয়ের পরে নন-অ্যালকোহলিক পানীয় পান করার দিকে ঝুঁকছেন।
একে “জেব্রা স্ট্রাইপিং” বলা হয়, যা রাতের পার্টিতে মদ্যপানের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।
তবে, সবার জন্য এই ধরনের পানীয় উপযুক্ত নাও হতে পারে। বিশেষ করে যারা অ্যালকোহল নির্ভরতা থেকে মুক্তি পেতে চেষ্টা করছেন, তাদের ক্ষেত্রে এটি সমস্যা তৈরি করতে পারে।
কারণ, এই পানীয়গুলো অনেক সময় অ্যালকোহলের প্রতি আসক্তিকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পানীয়গুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। যেমন, ককটেল তৈরিতে ব্যবহৃত সিরাপ ও সোডার কারণে অনেক সময় পানীয়গুলোতে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে।
অতিরিক্ত চিনি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, যা ডায়াবেটিসসহ নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই, পানীয় বাছাইয়ের সময় উপাদানগুলো ভালোভাবে দেখে নেওয়া উচিত।
বাংলাদেশেও হয়তো খুব শীঘ্রই নন-অ্যালকোহলিক পানীয়ের চাহিদা বাড়বে। যদিও আমাদের দেশে মদ্যপানের সংস্কৃতি পশ্চিমা বিশ্বের মতো নয়, তবুও স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং সুস্থ জীবনযাপনের আগ্রহ বাড়ছে।
সামাজিক অনুষ্ঠানে যারা অ্যালকোহল পান করেন না, তাদের জন্য এই ধরনের পানীয় একটি ভালো বিকল্প হতে পারে।
নন-অ্যালকোহলিক পানীয় নিঃসন্দেহে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে।
তবে, এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং নিজের শরীরের চাহিদা ও সীমাবদ্ধতা বুঝে পানীয় নির্বাচন করা জরুরি।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস