অবিশ্বাস্য! বহুগামীরাও কি একগামী সম্পর্কের মতোই সুখী?

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, বহুগামী (non-monogamous) সম্পর্কে থাকা ব্যক্তিরাও একগামী (monogamous) সম্পর্কের মানুষের মতোই সুখী। সম্পর্ক এবং যৌনজীবন—উভয় ক্ষেত্রেই তাদের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। গবেষণাটি এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে যে, ভালোবাসার ক্ষেত্রে একগামী সম্পর্কই একমাত্র পথ।

অস্ট্রেলিয়ার লা ট্রোব বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. জোয়েল অ্যান্ডারসন এবং তার দল এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন। তাঁরা ২০০৭ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে করা ৩৫টি গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। এই গবেষণাগুলোতে ২৪,০০০ এর বেশি মানুষের তথ্য অন্তর্ভুক্ত ছিল।

গবেষণায় পলিঅ্যামোরি (polyarmory), ওপেন রিলেশনশিপ (open relationship) এবং সুইং-এর (swinging) মতো বহুগামী সম্পর্কের বিভিন্ন ধরন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, একগামী এবং বহুগামী—উভয় ধরনের সম্পর্কে থাকা মানুষেরাই তাঁদের সম্পর্কের বিষয়ে প্রায় একই রকম সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। যৌনজীবনেও তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পার্থক্য দেখা যায়নি। কিছু গবেষণায় বহুগামী সম্পর্কে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে যৌন সন্তুষ্টি বেশি দেখা গেলেও, সামগ্রিকভাবে এই পার্থক্য তেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।

ড. অ্যান্ডারসন মনে করেন, সম্পর্কের ভালো-মন্দ নির্ভর করে সম্পর্কের ধরনের ওপর নয়, বরং সঙ্গীদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ, বোঝাপড়া এবং একে অপরের চাহিদা পূরণের ওপর। তাঁর মতে, “আমাদের সমাজে সম্পর্কের বিষয়ে প্রচলিত ধারণাগুলো থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত।”

গবেষকরা জানিয়েছেন, এই গবেষণার সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। যেমন, অংশগ্রহণকারীরা মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন, যা জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্ব নাও করতে পারে। তাছাড়া, বিভিন্ন দেশে বহুগামী সম্পর্কের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন হতে পারে।

যেহেতু গবেষণাটি মূলত উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপের দেশগুলোতে চালানো হয়েছে, তাই এর ফলাফল বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কতটা প্রাসঙ্গিক, তা নিয়ে আলোচনার অবকাশ রয়েছে। কারণ, আমাদের দেশে সম্পর্কের ধারণা, সামাজিক রীতিনীতি এবং সংস্কৃতি ভিন্ন।

তবে এই গবেষণা আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়। তা হলো, সম্পর্কের সাফল্য নির্ভর করে কাঠামোর চেয়ে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, ভালো বোঝাপড়া এবং সঙ্গীর প্রতি ভালোবাসার ওপর।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *