উত্তর কোরিয়া প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছে যে তারা ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষে সৈন্য পাঠিয়েছে। দেশটির নেতা কিম জং-উনের নির্দেশে এই সেনারা যুদ্ধ করছে এবং কিম তাদের ‘বীর’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। পশ্চিমা গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরগুলোর পর অবশেষে উত্তর কোরিয়ার এই স্বীকৃতি আসল।
রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চল পুনরায় দখলের ক্ষেত্রে উত্তর কোরীয় সেনাদের ভূমিকার কথা শোনা যাচ্ছে। যদিও ইউক্রেন এই দাবি অস্বীকার করেছে। তবে, রাশিয়ার পক্ষ থেকেও উত্তর কোরীয় সৈন্যদের উপস্থিতির কথা নিশ্চিত করা হয়েছে।
সোমবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ (KCNA) দেশটির ক্ষমতাসীন দলের বরাত দিয়ে জানায়, রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলের যুদ্ধ “উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে দৃঢ় সামরিক বন্ধুত্বের সর্বোচ্চ কৌশলগত পর্যায়” প্রমাণ করেছে।
সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, উত্তর কোরিয়া দীর্ঘদিন ধরেই রাশিয়াকে গোলাবারুদ, ক্ষেপণাস্ত্র এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করে আসছে। এই পরিস্থিতিতে, সৈন্যদের সরাসরি যুদ্ধে পাঠানোর সিদ্ধান্ত দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রবিবার এক ভাষণে জানান, রাশিয়ার সীমান্তবর্তী কুরস্ক এবং বেলগোরোদ অঞ্চলে এখনো ইউক্রেনীয় সেনারা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। মস্কো যদিও ওই অঞ্চলগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দাবি করেছে।
উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশন জানিয়েছে, গত জুন মাসে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে স্বাক্ষরিত একটি কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তির অধীনে কিম জং-উন এই সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কেসিএনএ-এর মতে, উত্তর কোরিয়া রাশিয়ার ভূখণ্ডকে নিজেদের দেশের মতোই বিবেচনা করে এবং এই পদক্ষেপ দুই দেশের মধ্যেকার দৃঢ় জোটের প্রমাণ।
সংস্থাটি আরও জানায়, কিম জং-উন বলেছেন, “যারা ন্যায়বিচারের জন্য যুদ্ধ করছে, তারা সবাই বীর এবং মাতৃভূমির সম্মানের প্রতীক।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, উত্তর কোরিয়া প্রায় ১৪,০০০ সৈন্য ইউক্রেনে পাঠিয়েছে, যাদের মধ্যে প্রায় ৩,০০০ অতিরিক্ত সেনা ছিল। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের কাছে সাঁজোয়া যান বা ড্রোন যুদ্ধের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না, তাই তারা হতাহতের শিকার হয়েছে, তবে দ্রুত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর উত্তর কোরিয়ার সরাসরিভাবে এই যুদ্ধে জড়িত হওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, পিয়ংইয়ংয়ের এই সামরিক মোতায়েন বন্ধ করতে হবে।
কিম জং-উন সম্ভবত রাশিয়ার কাছ থেকে সামরিক ও স্যাটেলাইট প্রযুক্তি পেতে পারেন, যা তার দেশের পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে আরও শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে। উত্তর কোরিয়া রাশিয়ার কাছ থেকে অর্থনৈতিক ও অন্যান্য সহায়তাও পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সম্ভবত দুই দেশ আগে থেকেই সৈন্যদের মোতায়েন করার বিষয়ে সম্মত হয়েছিল। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে তারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের ভাবমূর্তি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, এর বিনিময়ে সুবিধা পাওয়ার আশা করছে। সৈন্যদের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধার ঘোষণা করে উত্তর কোরিয়া সম্ভবত অভ্যন্তরীণ অসন্তোষও কমাতে চাইছে।
ইউক্রেন যুদ্ধে নিহত বা আহত উত্তর কোরীয় সেনার সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন সূত্রে ভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। জেলেনস্কি এই সংখ্যাটি প্রায় ৪,০০০ জন বলে উল্লেখ করেছেন, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুমান ১,২০০ জন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান