উত্তর কোরিয়ার পবিত্র পর্বত পেয়াকতু : ইউনেস্কো’র বিশ্ব ঐতিহ্য স্বীকৃতি।
কোরীয় উপদ্বীপের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ, উত্তর কোরিয়া ও চীনের সীমান্তে অবস্থিত একটি সুউচ্চ আগ্নেয়গিরি মাউন্ট পেয়াকতু। সম্প্রতি এই পর্বতকে ইউনেস্কো তাদের বিশ্ব ঐতিহ্যপূর্ণ স্থান হিসেবে ঘোষণা করেছে, যা উত্তর কোরিয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি।
দেশটির পক্ষ থেকে এই প্রথম কোনো প্রাকৃতিক স্থান ইউনেস্কোর এই তালিকায় স্থান পেলো।
ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেস্কো)-এর নির্বাহী পর্ষদ এই স্থানটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে “প্রভাবশালী প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য”, যার মধ্যে রয়েছে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত এবং এখানকার ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য।
পেয়াকতু পর্বত শুধু একটি প্রাকৃতিক স্থান নয়, উত্তর কোরিয়ার জনগণের কাছে এটি গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। কোরীয় কিংবদন্তি অনুসারে, এই পর্বতেই প্রথম কোরীয় রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা, ডাঙ্গুনের জন্ম হয়েছিল।
উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল-সং জাপানিদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এই পর্বতকে আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। এমনকি দেশটির প্রয়াত নেতা কিম জং-ইলের জন্মস্থান হিসেবেও এই পর্বতকে বিবেচনা করা হয়।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রায়শই এই পর্বতের সঙ্গে দেশটির নেতাদের সম্পর্ক তুলে ধরা হয়। তাদের ‘পেয়াকতু রক্তের ধারা’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়, যা তাদের শাসকদের একটি বিশেষ সম্মান এনে দিয়েছে।
পাহাড়টির চূড়ায় অবস্থিত ‘লেক চন’ নামের একটি বিশাল ক্যালডেরা হ্রদও (caldera lake) এই অঞ্চলের একটি বিশেষ আকর্ষণ। এটি ৭২০০ ফুটেরও বেশি উচ্চতায় অবস্থিত, যা সহস্রাব্দী প্রাচীন এক বিশাল অগ্ন্যুৎপাতের ফলে গঠিত হয়েছিল।
ইউনেস্কো এই স্থানটিকে স্বীকৃতি দেওয়ার কারণ হিসেবে পেয়াকতুর ভূ-প্রাকৃতিক গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেছে। এখানকার আগ্নেয়গিরির স্মৃতিচিহ্ন, হিমবাহের ক্ষয় দ্বারা গঠিত উপত্যকা এবং পাথুরে সমভূমি – সবকিছুই বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ।
তারা ৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত “সহস্রাব্দী প্রাচীন অগ্ন্যুৎপাত”-এর কথাও উল্লেখ করেছে, যা মানব ইতিহাসের অন্যতম শক্তিশালী অগ্ন্যুৎপাতগুলোর মধ্যে একটি ছিল।
বর্তমানে, বিশ্বের ৪৯টি দেশে ২০০টির বেশি বিশ্ব ঐতিহ্যপূর্ণ স্থান রয়েছে। ইউনেস্কো’র বিশ্ব ঐতিহ্য স্থানগুলি একটি সমন্বিত ধারণা নিয়ে পরিচালিত হয়, যেখানে আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলোর সংরক্ষণ, শিক্ষা এবং টেকসই উন্নয়নের উপর জোর দেওয়া হয়।
এই স্বীকৃতির ফলে, উত্তর কোরিয়া সম্ভবত পেয়াকতুকে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরতে চাইবে। এর মাধ্যমে তারা কোরীয় মিথ ও প্রকৃতির বিস্ময়কর দিকগুলো বিশ্ব দরবারে পরিচিত করতে পারবে।
তবে, এই স্বীকৃতি উত্তর কোরিয়ার জন্য কতটা ইতিবাচক হবে, নাকি এটি তাদের রাজনৈতিক প্রচারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে, বর্তমানে এই পর্বত তার মেঘাচ্ছন্ন ঢাল এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসা গল্পগুলোর সাথে আপন মহিমায় দাঁড়িয়ে আছে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন