উত্তর কোরিয়া গত এক বছরে রাশিয়াকে বিপুল পরিমাণে সামরিক সহায়তা পাঠিয়েছে, এমনটাই জানা যাচ্ছে জাতিসংঘের একটি পর্যবেক্ষণ দলের নতুন রিপোর্টে। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এই সহায়তা দুই দেশের মধ্যে গভীর সামরিক সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়।
রিপোর্টে সৈন্যদের পাশাপাশি ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলাবারুদ সহ বিভিন্ন ধরণের সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
মাল্টিল্যাটারাল স্যাংশনস মনিটরিং টিম (এমএসএমটি) নামের এই আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দলটি জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়া রাশিয়ার কাছে এক বছরে ১৪,০০০ সৈন্য পাঠিয়েছে।
এর মধ্যে গত বছর পাঠানো হয়েছিল ১১,০০০ সেনা এবং চলতি বছরের প্রথম দিকে আরও ৩,০০০ সেনা সদস্যকে। এছাড়াও, প্রায় ৯০ লক্ষ আর্টিলারি শেল ও গোলাবারুদ সরবরাহ করা হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, অন্তত ১০০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও সরবরাহ করা হয়েছে, যা ইউক্রেনের শহরগুলোতে, বিশেষ করে কিয়েভ এবং জাপোরিঝিয়ায় বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার এই সামরিক সহায়তার বিনিময়ে রাশিয়া তাদের অত্যাধুনিক সামরিক প্রযুক্তি সরবরাহ করছে।
এর মধ্যে রয়েছে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ইলেকট্রনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম এবং পরিশোধিত তেল। এমনকি, উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের কার্যকারিতা বাড়াতে রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্রের ডেটা সরবরাহ করে সাহায্য করছে।
পর্যবেক্ষণ দলের মতে, এই ধরনের সহযোগিতা উত্তর কোরিয়াকে তাদের সামরিক কর্মসূচি জোরদার করতে এবং ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির সুযোগ করে দিচ্ছে।
একইসঙ্গে, তারা আধুনিক যুদ্ধ সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতাও অর্জন করছে।
এমএসএমটি’র এই তথ্য সংগ্রহে সহায়তা করেছে ইউকে-ভিত্তিক ওপেন সোর্স সেন্টার (ওএসসি) এবং কনফ্লিক্ট আর্মামেন্ট রিসার্চ (সিএআর) এর মতো সংস্থাগুলো, যারা উন্মুক্ত তথ্য ব্যবহার করে গবেষণা করে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া উভয়ই জাতিসংঘের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন করছে।
দেশ দুটি এমন সব উপায়ে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করছে, যা নিষেধাজ্ঞাকে ফাঁকি দিতে সহায়তা করে।
পর্যবেক্ষক দলটি সতর্ক করে বলেছে, ভবিষ্যতে অন্তত নিকট ভবিষ্যতে দেশ দুটির মধ্যে সামরিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
এমএসএমটি’র সদস্য দেশগুলো – অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র – উত্তর কোরিয়াকে কূটনৈতিক আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়েছে।
পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে গভীর সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করে বলেছে, ইউক্রেন যুদ্ধে সহায়তার বিনিময়ে রাশিয়া উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে উন্নত মহাকাশ ও স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ভাগাভাগি করতে পারে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছেন যে, গত বছর ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের জন্য উত্তর কোরিয়ার সেনারা যুদ্ধ করেছে।
উত্তর কোরিয়াও তাদের সৈন্যের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে।
এদিকে, ইউক্রেনের মিত্র দেশগুলো কিয়েভে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এবং অন্যান্য অঞ্চলে ব্যাপক বিমান হামলার প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার অভ্যন্তরে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন
