জোয়ান ডিডিয়ানের ব্যক্তিগত ডায়েরি: গোপনতার আগ্রাসন?
বিখ্যাত লেখিকা জোয়ান ডিডিয়ানের মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়েছে তাঁর ব্যক্তিগত নোটগুলির একটি সংকলন, যার শিরোনাম ‘নোটস টু জন’। এই বইটি মূলত তাঁর মনোচিকিৎসক রজার ম্যাকিননের সঙ্গে কাটানো সেশনগুলির নোটের সমষ্টি। যেখানে ডিডিয়ান তাঁর মেয়ে কুইন্টানা’র মদ্যপান এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। এই নোটগুলি প্রকাশের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
ডিডিয়ান তাঁর লেখক জীবনের শুরু থেকেই ব্যক্তিগত জীবনকে আড়ালে রাখতে অভ্যস্ত ছিলেন। তাঁর লেখার ধরন ছিল গভীর এবং নিজস্ব। কিন্তু এই বইটিতে, যেন ক্যামেরার সামনে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে আসা একজন মানুষের মতো, ডিডিয়ান তাঁর দুর্বলতা এবং উদ্বেগের কথা অকপটে প্রকাশ করেছেন। কুইন্টানার অসুস্থতা, তাঁর চিকিৎসা এবং সেই সংক্রান্ত ডিডিয়ানের উদ্বেগ—সবই এই বইয়ের পাতায় উঠে এসেছে। বিষয়টি এতটাই ব্যক্তিগত যে, অনেকের মতে, এটি যেন ডিডিয়ানের গোপনীয়তার উপর সরাসরি আক্রমণ।
বইটিতে ডিডিয়ান তাঁর স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের গভীরতাও তুলে ধরেছেন। কুইন্টানা তাঁর বাবা-মায়ের এই ঘনিষ্ঠতাকে অনেক সময় ভালোভাবে নেননি। ডিডিয়ানের লেখার ধরন এখানে বেশ সাধারণ, যা তাঁর অন্যান্য বিখ্যাত কাজের থেকে ভিন্ন। সমালোচকদের মতে, এই বই ডিডিয়ানের শ্রেষ্ঠ কাজগুলির সারনির্যাস নয়, বরং তাঁর জীবনের একটি কঠিন সময়ের প্রতিচ্ছবি।
কুইন্টানার অ্যালকোহল আসক্তি এবং মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ডিডিয়ানের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ ছিল। তিনি সবসময় মেয়ের সুস্থ জীবন চেয়েছেন। সম্ভবত এই কারণেই, তিনি তাঁর ভেতরের কথাগুলো লিখে রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাঁর এই নোটগুলো একদিকে যেমন তাঁর ব্যক্তিগত বেদনার দলিল, তেমনই একজন মায়ের অসহায়ত্বের প্রতিচ্ছবি।
বইটি ডিডিয়ানের পরবর্তী দুটি বিখ্যাত কাজ, ‘দ্য ইয়ার অফ ম্যাজিক্যাল থিংকিং’ এবং ‘ব্লু নাইটস’-এর প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে। এই বইগুলোতে ডিডিয়ান তাঁর স্বামী এবং মেয়ের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। এই দুটি বইয়ের গভীরতা অনুভব করতে ‘নোটস টু জন’-এর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
তবে, প্রশ্ন হল, একজন লেখকের ব্যক্তিগত শোক এবং দুর্বলতা কি সকলের সামনে তুলে ধরা উচিত? সমালোচকদের একাংশ মনে করেন, এই বই প্রকাশের মাধ্যমে ডিডিয়ানের ব্যক্তিগত জীবনকে জনসমক্ষে উন্মোচন করা হয়েছে, যা হয়তো তাঁর প্রতি সুবিচার নয়।
বইটি প্রকাশ করেছে ফোর্থ এস্টেট।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান