নওরোজ: নতুন বছর, নতুন আশা – পারস্য সংস্কৃতির এক ঝলক
বসন্তের আগমন মানেই প্রকৃতির নতুন রূপে সেজে ওঠা। ফুল ফোটে, গাছে নতুন পাতা আসে, আর এই সময়েই ইরানে পালিত হয় নওরোজ।
নওরোজ মানেই পারস্য বর্ষবরণ উৎসব, যা নতুন জীবনের উদযাপন। প্রতি বছর ২১শে মার্চ, অর্থাৎ বসন্তের বিষুবের দিন এই উৎসবের সূচনা হয়।
নওরোজ উৎসবের মূল সুর হলো পুনর্জন্ম ও নতুন করে শুরু করা। শীতের দীর্ঘ, কঠিন সময় পেরিয়ে প্রকৃতির বুকে যখন প্রাণের স্পন্দন লাগে, ঠিক তখনই নওরোজের আনন্দ ছড়িয়ে পরে।
এই উৎসব শুধু ইরানের নয়, বরং তুরস্ক, আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশেও পালিত হয়।
নওরোজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ‘হাফত সিন’ নামে পরিচিত একটি ঐতিহ্য। ‘হাফত সিন’-এর অর্থ হলো ফার্সি ভাষায় ‘সাতটি ‘স’।
এই উৎসবে একটি টেবিলের উপর সাতটি জিনিস রাখা হয়, যেগুলোর প্রত্যেকটি ফার্সি ভাষায় ‘স’ অক্ষর দিয়ে শুরু হয় এবং নতুন বছরের জন্য শুভকামনা বয়ে আনে।
যেমন – আপেল (সুস্বাস্থ্য), মোমবাতি (আলো), ডিম (উর্বরতা), গমের চারা (পুনর্জন্ম), সিরকা বা ভিনেগার (প্রজ্ঞা), সোনার মুদ্রা (প্রাচুর্য) ইত্যাদি।
প্রতিটি জিনিসের নিজস্ব তাৎপর্য রয়েছে এবং এগুলো নতুন বছরে ভালো কিছু পাওয়ার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।
নওরোজ উৎসব চলে প্রায় দু’ সপ্তাহ ধরে।
উৎসবের শেষে, ‘হাফত সিন’-এর উপরে রাখা গমের চারাগুলো বয়ে নিয়ে যাওয়া হয় কোনো নদীর ধারে। সেখানে এই ঘাসগুলোতে সুতো বেঁধে, নতুন বছরের আশা ও আকাঙ্ক্ষাগুলো মনে করে পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।
উৎসবের আরেকটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো খাবার।
নওরোজ যেহেতু বসন্তের উৎসব, তাই খাবারে সতেজ ভেষজ উপাদান ব্যবহার করা হয়।
‘কুকু সাবজি’ তেমনই একটি জনপ্রিয় খাবার, যা সবুজ শাক ও বিভিন্ন ধরনের ভেষজ উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়।
এটি অনেকটা আমাদের দেশের সবজি বড়ার মতো।
এছাড়াও, নওরোজের প্রথম দিনের খাবারে মাছ পরিবেশন করা হয়, যার সাথে থাকে সুগন্ধিযুক্ত ভেষজ মিশ্রিত ভাত।
এই সময়টাতে বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যাওয়া হয় এবং নানা ধরনের মিষ্টি ও মুখরোচক খাবার পরিবেশন করা হয়।
নওরোজ উদযাপনের একটি সহজ উপায় হলো, এই উৎসবের ঐতিহ্যপূর্ণ খাবারগুলো রান্না করা।
কুকু সাবজির মতো খাবারগুলো যেমন সুস্বাদু, তেমনই স্বাস্থ্যকর।
পারস্য রন্ধনশৈলীতে ভেষজ উপাদানের ব্যবহার একে অন্যরকম মাত্রা দেয়।
নওরোজের আগে ঘর পরিষ্কার করার একটি বিশেষ রীতি পালন করা হয়, যা ফার্সি ভাষায় ‘খানাতে তাকানদান’ নামে পরিচিত।
এর মাধ্যমে পুরনো বছরের জঞ্জাল সরিয়ে নতুন জীবনের আহ্বান জানানো হয়।
নওরোজ উৎসব কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের সঙ্গে জড়িত নয়, বরং এটি একটি সাংস্কৃতিক উৎসব, যা সবার জন্য উন্মুক্ত।
পুরনো বছরের দুঃখ-কষ্ট ভুলে, নতুন বছরে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনায় এই উৎসব পালন করা হয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন