যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে এবার আদালতে গেল দেশটির অন্যতম জনপ্রিয় বেতার কেন্দ্র ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও (এনপিআর)। ট্রাম্পের এই আদেশে এনপিআর-এর তহবিল বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে।
এনপিআর কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনীকে সরাসরি লঙ্ঘন করে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং সংগঠন করার অধিকারের পরিপন্থী। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে জনসাধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ ও তথ্যের প্রধান উৎস, এমন একটি বেতার ব্যবস্থা বন্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
গত ১লা মে তারিখে ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন, যেখানে এনপিআর এবং এর টেলিভিশন সহযোগী প্রতিষ্ঠান, পাবলিক ব্রডকাস্টিং সার্ভিস (পিবিএস)-এর বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনা হয়।
একইসঙ্গে, তিনি পাবলিক ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনকে (সিপিবি) এই দুটি প্রতিষ্ঠানের জন্য তহবিল বন্ধ করার নির্দেশ দেন। উল্লেখ্য, সিপিবি একটি বেসরকারি অলাভজনক সংস্থা, যা পাবলিক রেডিও ও টিভির জন্য অর্থ বিতরণ করে।
তবে, এনপিআর-এর আইনজীবীরা বলছেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সাধারণ শ্রোতারা।
তাদের মতে, এই নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এনপিআর এবং এর সদস্য স্টেশনগুলোর পাশাপাশি, দেশটির কোটি কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যারা সংবাদ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও জরুরি তথ্যের জন্য এই বেতার মাধ্যমের উপর নির্ভরশীল।
যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, কংগ্রেস দীর্ঘদিন ধরে পাবলিক রেডিও ও টিভির জন্য অর্থ বরাদ্দ করে আসছে। এমনকি, ট্রাম্প নিজেও এর আগে একটি বিলে স্বাক্ষর করেছিলেন, যেখানে এই খাতে অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
সিপিবি প্রতি বছর প্রায় ৫৩ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকার সমান, ডলারের বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী) পাবলিক রেডিও ও টেলিভিশন স্টেশনগুলোতে বিতরণ করে থাকে।
এই স্টেশনগুলো খবর, জরুরি বার্তা এবং বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান বিনামূল্যে সম্প্রচার করে থাকে।
আদালতে দায়ের করা মামলায় এনপিআর জানিয়েছে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ কংগ্রেসের ইচ্ছারও পরিপন্থী।
কারণ, কংগ্রেস সবসময়ই পাবলিক ব্রডকাস্টিংয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছে।
এর আগে ট্রাম্প তার শাসনামলে পিবিএস ও এনপিআর-এর তহবিল বন্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু কংগ্রেস তা অনুমোদন করেনি।
এবার তিনি ভিন্ন পথে সরকারি সম্প্রচার মাধ্যম বন্ধ করতে চাইছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ খবর প্রচারের অভিযোগ করছেন।
এদিকে, পিবিএসও আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তবে তারা এখনো মামলা দায়ের করেনি।
এই মামলার রায় কী হয়, সেদিকে এখন সবার দৃষ্টি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন