মার্স মিশনে যুগান্তকারী পরিবর্তন! পারমাণবিক রকেটের নতুন ধারণা!

মহাকাশ অভিযানের দিগন্তে নতুন দিগন্ত, পারমাণবিক শক্তিচালিত রকেটের হাত ধরে কমবে মঙ্গলযাত্রার সময়!

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির এই যুগে, মহাকাশ জয় মানুষের কাছে আর কোনো কল্পনাবিলাস নয়। বরং, এটি এখন বাস্তবতার খুব কাছাকাছি।

সম্প্রতি, ব্রিটেনের একটি স্টার্টআপ কোম্পানি, পালসার ফিউশন, ‘সানবার্ড’ নামের একটি নতুন ধরনের রকেট তৈরির পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে, যা মহাকাশ যাত্রায় আনতে পারে যুগান্তকারী পরিবর্তন। এই রকেটটি পারমাণবিক ফিউশন প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।

এর ফলে, মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার সময় অর্ধেকেরও বেশি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

সাধারণ পারমাণবিক চুল্লিতে ব্যবহৃত হয় ‘ফিশন’ প্রক্রিয়া। যেখানে ভারী পরমাণু ভেঙে শক্তি উৎপন্ন করা হয়।

কিন্তু সানবার্ড কাজ করবে ‘ফিউশন’ পদ্ধতিতে, যা সূর্যের অভ্যন্তরে ঘটে। এই প্রক্রিয়ায় হালকা হাইড্রোজেন পরমাণু একত্রিত হয়ে হিলিয়াম তৈরি করে বিপুল পরিমাণ শক্তি নির্গত করে।

ফিউশন প্রক্রিয়ায় ফিশনের চেয়ে চারগুণ বেশি শক্তি পাওয়া যায় এবং এটি তেজস্ক্রিয় বর্জ্য তৈরি করে না।

পালসার ফিউশনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, রিচার্ড ডিনান জানিয়েছেন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ফিউশন ঘটানো কঠিন।

তাই মহাকাশ হলো এই প্রযুক্তির জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, সানবার্ড মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হবে এবং অন্যান্য মহাকাশযানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে গন্তব্যের দিকে যাত্রা করবে।

এই রকেটে অত্যন্ত অল্প পরিমাণ জ্বালানি ব্যবহার করা হবে, যা এটিকে অনেক বেশি কার্যকর করে তুলবে।

কোম্পানিটি জানিয়েছে, ২০২৭ সালের মধ্যে তারা কক্ষপথে ফিউশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।

প্রাথমিক পর্যায়ে, স্যাটেলাইটগুলোকে কক্ষপথে স্থানান্তরের জন্য সানবার্ড ব্যবহার করা হবে।

তবে, এর আসল সম্ভাবনা দেখা যাবে আন্তঃগ্রহ অভিযানে।

উদাহরণস্বরূপ, এই রকেট ব্যবহার করে ৬ মাসেরও কম সময়ে ২,০০০ কিলোগ্রাম ওজনের মালপত্র নিয়ে মঙ্গল গ্রহে যাওয়া সম্ভব হবে।

এছাড়া, বৃহস্পতি ও শনি গ্রহে অনুসন্ধানী যান পাঠাতে সময় লাগবে মাত্র ২ থেকে ৪ বছর, যেখানে বর্তমান প্রযুক্তিতে এর চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগে।

এই প্রকল্পের জন্য প্রায় ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭০০ কোটি টাকা) খরচ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যদিও এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেমন প্রযুক্তিকে ছোট এবং হালকা করা, তবে বিজ্ঞানীরা এই প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে অত্যন্ত আশাবাদী।

ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের একজন অধ্যাপক, অ্যারন নোল, জানিয়েছেন, মহাকাশযানের গতি বাড়াতে ফিউশন প্রযুক্তির বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।

ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ভাবনা শ্রীনিবাসন মনে করেন, এই প্রযুক্তি সফল হলে তা শুধু সময় বাঁচাবে তাই নয়, মহাকাশ অনুসন্ধানেও নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

বিশেষ করে, চাঁদে হিলিয়াম-৩-এর মতো মূল্যবান সম্পদ আহরণ করা সহজ হবে, যা গভীর মহাকাশ অনুসন্ধানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মতে, ফিউশন প্রযুক্তির মাধ্যমে শুধু মানুষ আরও দূরে যেতে পারবে তা নয়, বরং মানুষবিহীন অভিযানগুলোতেও এটি বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *