মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মাঝে বেইজিংয়ে এনভিডিয়া প্রধানের গোপন সফর! চীন কি পারবে?

চীনের বাজারে চিপ রপ্তানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারির কয়েক দিন পরেই, এনভিদিয়ার প্রধান নির্বাহী জেনসেন হুয়াং আকস্মিকভাবে বেইজিং সফর করেছেন। বৃহস্পতিবারের এই সফরে, চীনের বাজারে তাদের চিপ সরবরাহ অব্যাহত রাখার একটি ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। প্রযুক্তিখাতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এই সফরটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।

চীনের একটি বাণিজ্য সংগঠনের আমন্ত্রণে হুয়াংয়ের এই বেইজিং সফর অনুষ্ঠিত হয়। সরকারি সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, তিনি চীনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রসার পরিষদের প্রধান রেন হংবিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে হুয়াং চীনের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র ‘চায়না ডেইলি’ তাদের প্রতিবেদনে জানায়, এর আগে গত তিন মাস আগেও হুয়াং চীন সফরের সময় একই ধরনের আগ্রহের কথা বলেছিলেন।

প্রতিবেদনে ‘#OpportunityChina’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হয়, যা সাধারণত চীন-মার্কিন বাণিজ্য প্রসারের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞার ফলে এনভিদিয়ার জন্য একটি কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার ঘোষিত এই নিষেধাজ্ঞায় তাদের এইচ২০ ডেটা সেন্টার জিপিইউ (GPU)-এর চালান সীমিত করা হয়েছে। যদিও এই চিপগুলো বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছিল যাতে চীনের বাজারে তাদের সরবরাহ বজায় রাখা যায়, কিন্তু মার্কিন সরকার মনে করে এই পণ্যগুলো চীনের সুপারকম্পিউটারে ব্যবহার করা হতে পারে, যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ। এর ফলে এনভিদিয়ার আয় প্রায় ৫.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৬০০০০ কোটি টাকার বেশি) কমে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বুধবার শেয়ার বাজারেও এর প্রভাব দেখা গেছে, যেখানে কোম্পানির শেয়ারের দাম প্রায় ৭ শতাংশ কমে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চীনের প্রযুক্তি খাতে সরবরাহ বন্ধ এবং বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের কারণে প্রযুক্তি শিল্পে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এনভিদিয়ার শেয়ারের দর পতন সেই অস্থিরতারই একটি অংশ। এর আগে, ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য বিদেশি কোম্পানিগুলোর ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিল।

তবে, তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (TSMC)-এর যুক্তরাষ্ট্রে বিশাল বিনিয়োগের ঘোষণার পর, তাদের শুল্ক থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, বেইজিং সফরে হুয়াং ‘ডিপসিক’ (DeepSeek) নামক একটি এআই (AI) কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা লিয়াং ওয়েনফেং-এর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে এমন চিপ ডিজাইন নিয়ে আলোচনা হয়েছে যা যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে না। উল্লেখ্য, গত জানুয়ারিতে ‘ডিপসিক’-এর আবির্ভাব প্রযুক্তি বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে।

কারণ, তুলনামূলকভাবে কম বিনিয়োগে তারা উন্নতমানের একটি এআই চ্যাটবট তৈরি করেছে।

মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের চীন বিষয়ক কমিটি এরই মধ্যে এনভিদিয়ার কাছে জানতে চেয়েছে, ‘ডিপসিক’ তাদের এআই অ্যাপ্লিকেশনের জন্য রপ্তানি নিয়ন্ত্রিত চিপ ব্যবহার করছে কিনা। তারা মনে করে, এই অ্যাপটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।

জেনসেন হুয়াং অবশ্য বলেছেন, তারা আইনি বাধ্যবাধকতা এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখবেন।

তাইওয়ানে জন্ম নেওয়া হুয়াং এর আগে বলেছিলেন, প্রযুক্তিখাতে বৈশ্বিক অগ্রগতিকে কেউ আটকাতে পারবে না। তার বেইজিং সফর চীন ও তাইওয়ানের সামাজিক মাধ্যমে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তাইওয়ানে তিনি একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি, যেখানে তার সফরের সময় প্রচুর ভক্তের সমাগম হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি বিশ্ববাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে। তিনি বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে বাণিজ্য ঘাটতির অভিযোগ এনে শুল্ক আরোপ করেছিলেন, যদিও পরে তা কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয় (চীনের ক্ষেত্রে ১৪৫ শতাংশ বহাল ছিল)।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *