এনভিডিয়ার নতুন চিপ নিয়ে চীন সরকারের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেনসেন হুয়াং। শুক্রবার তাইওয়ানে এক সফরের সময় তিনি এ কথা জানান।
সেখানে তিনি এনভিডিয়ার প্রধান উৎপাদন সহযোগী, বিশ্বের বৃহত্তম চিপ নির্মাতা তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কর্পোরেশনের (টিএসএমসি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
চীনের জন্য একটি বিশেষ কম্পিউটার চিপ তৈরির পরিকল্পনা করছে এনভিডিয়া। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ডেটা সেন্টারগুলির জন্য এই ‘বি৩০এ’ সেমিকন্ডাক্টর তৈরির বিষয়ে আলোচনা চলছে।
হুয়াং জানান, ‘আমরা চীনের জন্য নতুন একটি পণ্য সরবরাহ করার প্রস্তাব দিচ্ছি, যা এইচ২০-এর পরবর্তী সংস্করণ। তবে, এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আমাদের হাতে নেই।
অবশ্যই, এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের সিদ্ধান্ত। আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করছি, তবে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়।’
এই ধরনের চিপগুলি গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট (জিপিইউ) নামে পরিচিত, যা বিভিন্ন এআই সিস্টেম তৈরি ও আপডেট করতে ব্যবহৃত হয়।
তবে, বর্তমানের এনভিডিয়ার সেরা সেমিকন্ডাক্টরগুলির চেয়ে এগুলি কম শক্তিশালী।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা বিধিনিষেধের কারণে চীনের কাছে সেগুলি বিক্রি করা যায় না।
জানা গেছে, ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক এনভিডিয়ার ব্ল্যাকওয়েল প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরি ‘বি৩০এ’ চিপটি এনভিডিয়ার প্রধান ‘বি ৩০০’ চিপের প্রায় অর্ধেক গতিতে কাজ করে।
হুয়াং জানান, সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন এনভিডিয়ার এইচ২০ চিপ চীনকে বিক্রির অনুমোদন দেওয়ায় তিনি খুশি।
যদিও এই অনুমোদনের শর্ত ছিল, কোম্পানিকে এই বিক্রির উপর ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে।
একই হারে কর দিতে হবে এএমডি-কেও, যারা চীনের কাছে তাদের এমআই৩৮০ চিপ বিক্রি করে।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বৃহত্তর বাণিজ্য আলোচনার অংশ হিসেবে সম্প্রতি কিছু শুল্কমুক্ত বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে।
চীন যুক্তরাষ্ট্রকে বিরল মৃত্তিকা চুম্বক (rare earth magnets) রপ্তানির জন্য আরও বেশি অনুমতি দিয়েছে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র চিপ ডিজাইন সফটওয়্যার এবং জেট ইঞ্জিনগুলির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে।
হুয়াংয়ের তদবিরের পর এইচ২০ চিপ বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়।
তবে, এই বিষয়ে কর নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি হুয়াং।
তিনি জানান, এইচ২০ চিপ চীনকে বিক্রি করতে পারায় তারা আনন্দিত।
একইসঙ্গে, তিনি নিশ্চিত করেন, এই ধরনের বিক্রি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করবে না।
এনভিডিয়া বেইজিংয়ের সঙ্গেও কথা বলছে, যাতে চীনা কর্তৃপক্ষকে বোঝানো যায় যে এই চিপগুলি কোনো ‘ব্যাকডোর’ নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করে না।
চীনের সাইবারস্পেস প্রশাসন তাদের ওয়েবসাইটে এনভিডিয়ার কম্পিউটার চিপগুলির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
তারা জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের এআই বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই চিপগুলিতে ‘ট্র্যাকিং, লোকেশন এবং দূর থেকে বন্ধ করার প্রযুক্তি’ রয়েছে।
এনভিডিয়াকে এই বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা এবং তথ্য দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
হুয়াং জানান, এমন অভিযোগে এনভিডিয়া অবাক হয়েছে এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুডনিক সিএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল হলো চীনকে আমেরিকান চিপ প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল রাখা।
তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের সেরা জিনিসগুলো বিক্রি করি না, এমনকি দ্বিতীয় সেরাটাও না।
আমার মনে হয়, চতুর্থ সেরাটা বিক্রি করতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।’
চীনের কমিউনিস্ট পার্টি উন্নত প্রযুক্তিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের ওপর জোর দিচ্ছে।
যদিও তারা এখনো তাদের উৎপাদনের জন্য বিদেশি সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস