মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর ট্রাম্প প্রশাসনের ২ বিলিয়ন ডলার ফেডারেল অনুদান বন্ধ করার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। মূলত, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইহুদি-বিদ্বেষ প্রতিরোধের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তবে, হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে একে তাদের একাডেমিক স্বাধীনতা খর্ব করার চেষ্টা হিসেবে দেখছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা হার্ভার্ডের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
ফেডারেল সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন অবস্থানের পর পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এই পদক্ষেপের কারণ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইহুদি-বিদ্বেষের বিস্তার রোধের কথা বললেও, অনেক শিক্ষাবিদ মনে করেন, এর মূল উদ্দেশ্য হলো একাডেমিক স্বাধীনতাকে সীমিত করা।
হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার বলেছেন, “কোনো সরকার – তা যে দলেরই হোক না কেন – কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে কী পড়ানো হবে, কাদের ভর্তি করা হবে এবং কোন বিষয়ে গবেষণা করা হবে, তা নির্ধারণ করতে পারে না।”
ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের ফলে, হার্ভার্ডের পাশাপাশি আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর ফেডারেল অনুদান বন্ধের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রিন্সটন এবং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
এই দুটি বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের প্রাঙ্গণে ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভ এবং ইহুদি-বিদ্বেষের অভিযোগের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের শর্ত মানতে হয়েছে, যার মধ্যে মুখঢাকা নিষিদ্ধ করা এবং মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক গবেষণা কার্যক্রম পর্যালোচনা করার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত।
অন্যদিকে, এই ঘটনার জেরে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া, অনেক শিক্ষার্থীর ভিসা এবং অভিবাসন সংক্রান্ত আইনি অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক মানের মেধাবী শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির উপরও পড়তে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যারা ফেডারেল তহবিল গ্রহণ করে, তাদের অবশ্যই নাগরিক অধিকার আইন মেনে চলতে হবে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কুশ দেসাই জানিয়েছেন, এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো ইহুদি-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
তিনি বলেন, “ইহুদি-বিদ্বেষী বিক্ষোভকারীরা সহিংসতা ঘটাচ্ছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনগুলো দখল করছে, যা কেবল ইহুদি-আমেরিকানদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ আচরণই নয়, বরং ফেডারেল অর্থায়নে পরিচালিত কলেজগুলোতে গবেষণা ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চাকেও ব্যাহত করে।”
এই বিতর্কের প্রেক্ষাপটে, অনেকেই মনে করছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপের পেছনে আরও কিছু উদ্দেশ্য রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষাখাতে বামপন্থী প্রভাব কমানো এবং ভর্তির ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি বাতিল করা।
বর্তমানে, এই ঘটনার জেরে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলারের বেশি ফেডারেল ফান্ড স্থগিত অথবা বাতিল করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে একাডেমিক স্বাধীনতা এবং সরকারের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ডলারের হিসাবে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (USD) = প্রায় ২১৪০০ কোটি বাংলাদেশী টাকা (BDT), যেখানে ১ মার্কিন ডলার = ১০৭ টাকা (১১ জুন, ২০২৪)।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান