আতঙ্কের ঢেউ! গণতন্ত্র নিয়ে ওবামার বিস্ফোরক মন্তব্য

বারাক ওবামার কণ্ঠে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সম্প্রতি গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁর এই সতর্কবার্তা যেন ক্রমশ যুক্তরাষ্ট্রকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে। হাঙ্গেরি এবং পোল্যান্ডের গণতন্ত্রপন্থী কর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বিশ্বজুড়ে কর্তৃত্ববাদের উত্থান নিয়ে কথা বলেন।

একসময় যে দেশগুলোতে গণতন্ত্রের স্থিতিশীলতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ছিল না, সেখানেও এখন স্বাধীনতা খর্ব হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ওবামা তাঁর বক্তব্যে রাজনীতিবিদদের দ্বারা নাগরিক সমাজকে দুর্বল করা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা এবং বিচার বিভাগের রাজনৈতিক ব্যবহারের মতো বিষয়গুলো তুলে ধরেন।

তিনি স্পষ্টভাবে কারো নাম উল্লেখ না করলেও, তাঁর আলোচনায় পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দিকে। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ওবামা তাঁর কঠোর সমালোচনা করেছেন।

গত মাসে লন্ডনে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে ওবামা হাঙ্গেরির দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন ‘অ্যাকশন ফর ডেমোক্রেসি’-র প্রতিষ্ঠাতা স্যান্ডর লেডারার, হাঙ্গেরিয়ান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের প্রাক্তন কো-ডিরেক্টর স্টেফানিয়া কাপ্রনজাই এবং পোল্যান্ডের প্রাক্তন উপ-বিচারমন্ত্রী জুজান্না রুডজিনস্কা-ব্লুস্কা-র সঙ্গে কথা বলেন।

তাঁরা সবাই ওবামা ফাউন্ডেশনের তরুণ নেতৃত্ব প্রোগ্রামের সদস্য ছিলেন।

আলোচনায় ওবামা বলেন, “আমি ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদের উত্থান নিয়ে উদ্বিগ্ন। রাজনীতিবিদরা প্রায়ই এমন সব প্রতিশ্রুতি দেন, যা পুরনো দিনের কথা মনে করিয়ে দেয়, অথচ বাস্তবে সেগুলোর কোনো কার্যকারিতা থাকে না।”

ওবামার এই মন্তব্য শুধু বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের প্রতিই নয়, বরং ট্রাম্পের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপনকারী কিছু নেতার প্রতিও একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে।

হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের কথা উল্লেখ করে ওবামা বলেন, তিনি “অগণতান্ত্রিক গণতন্ত্রের” একজন প্রধান সমর্থক। এমনকি ট্রাম্পও অরবানকে একজন “মহান নেতা” এবং “খুব শক্তিশালী মানুষ” হিসেবে প্রশংসা করেছেন।

অন্যদিকে, পোল্যান্ডে ডানপন্থী পপুলিস্ট ল’ অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির একজন কট্টরপন্থী নেতা দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেন।

এই ঘটনা পোল্যান্ডে কর্তৃত্ববাদের অবসান ঘটানোর প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

ওবামা আরও উল্লেখ করেন যে, অনেক ক্ষেত্রে সরকারগুলো জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। এর ফলে ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর উত্থান ঘটছে এবং অভিবাসনবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি মনে করেন, বর্তমান জটিল অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে মানুষ নিজেদের নিয়ন্ত্রণহীন মনে করছে এবং রাজনীতিবিদদের উপর আস্থা হারাচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিভেদ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে উল্লেখ করে ওবামা বলেন, “আমরা এখনো এমন কোনো নতুন পথের সন্ধান করতে পারিনি, যা মানুষকে সক্রিয় করবে এবং তাদের মধ্যে ক্ষমতাবোধ তৈরি করবে।”

ওবামা আরও যোগ করেন যে, কর্তৃত্ববাদী শাসকেরা প্রায়ই বিদ্যমান কাঠামো ভেঙে দিয়ে নিজেদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে তাঁদের কোনো আগ্রহ থাকে না। কারণ এর জন্য নতুন কাঠামো তৈরি করতে হয়, যা তারা করতে চায় না।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *